যখন তোমরা নিরাপদ ছিলে তখন তোমাদেরকে আহ্বান করা হয়েছিল এই সেজদা দিতে। তোমরা তখন এ সেজদা কর নি বিধায় আজ আল্লাহর পায়ে সেজদা করতে সক্ষম হচ্ছে না। কালাম, ৪৩ আয়াত। বর্তমানে এক শ্রেণীর মানুষ আছে তারা এই ঘটনা মিথ্যা প্রমাণ করার লক্ষে নিম্নলিখিতভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যুক্তি প্রদর্শন করে বলে। আদম কাবায় সেজদার হুকুম তো শুধু ফেরেস্তাদের জন্য ছিল। আমাদের জন্য ছিল না বিধায় আমরা ঐ সেজদা করি নি। তোমরা এমনটি তর্ক করবে বিধায় তোমাদেরকে পূর্বেই সতর্ক করা হয়েছিল যে, ইবলিস জিন জাতীয়। কাহফ, আয়াত-৫০। ইবলিস জিন হওয়া সত্ত্বেও যখন আদম কাবায় সেজদা না দিয়ে কাফের তাহলে ঐ সেজদা শুধু ফেরেস্তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না বরং প্রত্যেকের জন্য ফরজ ছিল। তখন তারা বলে ফেরেস্তা ও জিনদের জন্য আদম কাবায় সেজদা ফরজ ছিল কিন্তু উহা আমাদের জন্য নয়। তোমরা এমনি ভাবে তর্ক করবে বিধায় তোমাদেরকে পূর্বেই সতর্ক করা হয়েছে। কাফ, আয়াত-২৮। ইউসুফকে সেজদা দিল ইউসুফের ১১ ভাই এবং পিতা মাতা। ইউসুফ, আয়াত-১০০। তখন তারা বলে ওটা ছিল ইউসুফকে নবী হিসেবে সম্মান জনক সেজদা। আর ঐ সকল সেজদার আয়াতগুলো রহিত করা হয়েছে, তোমরা এমনি তর্ক করবে বিধায় তোমাদেরকে সতর্ক করার লক্ষ্যে পূর্বেই বলা হয়েছে যে, সম্মানজনক কোনো সেজদা নেই কারণ সকল সেজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য। জিন, আয়াত ১৮। আর কোনো আয়াত রহিত কা হয় নি। বাকারা, আয়াত-১০৬। তখন তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করে পুনরায় যুক্তি প্রদর্শন করে বলবে আদম কাবায় সেজদার বিধান আদম থেকে ইউসুফ পর্যন্ত চালু ছিল। তার পরের থেকে আদম কাবায় সেজদার বিধান নেই। কথাটা ঠিক নয় কারণ আল্লাহর বিধানের কোনো পরিবর্তন নেই। এই বিষয়ে আল্লাহ বলেন, হে মোহাম্মদ (স.) তোমর পূর্বে যে সকল রসূল ছিল তাদের ক্ষেত্রে যে নিয়ম চালু ছিল তোমার ক্ষেত্রে একই নিয়ম আমার নিয়মের কোনো পরিবর্তন নেই। বনী ইসলাইল আয়াত-৭৭। কাজেই আল্লাহ সে দিন বলবে, তোমরা নিরাপদ থাকা অবস্থায় প্রকাশ্য আল্লাহর পায়ে সেজদা দাও নি বিধায় আজ সেজদা দিতে সক্ষম হচ্ছ না। কালাম আয়াত-৪৩। তখন তারা বলবে হে প্রভু আমরা সব শুনলাম এবং দেখলাম আমাদেরকে পুনরায় প্রেরণ করা হোক আমরা এ কর্মটি করিব। সেজদা আয়াত-১২। আল্লাহ বলবেন না, তোমরা মৃত্যুর সময়ও এমনটি বলেছিলে, ২৩ মমিন আয়াত-৯৯। না, ইহা একটি উক্তি মাত্র। তোমাদেরকে পুনরায় পূর্ব অবস্থায় প্রেরণ করা হবে না। পরবর্তী পুনর্জীবিত হওয়ার দিন পর্যন্ত তোমাদের সম্মুখে বরযখ থাকবে। ২৩ মমিন আয়াত-১০০। অতএব, পবিত্র কোরআন মোতাবেক মানব আকৃতি বিশিষ্ট আল্লাহ বিশ্বাস ব্যতিরেকে মানুষের জন্য মুক্তির কোনো পথ নেই। আর ইমান আনা এবং মুক্তির পথ কেবলমাত্র সম্যক গুরু তথা রসূল এর সঙ্গ ধারণ করে আল্লাহর পরিচয় লাভ করা।
তাছাড়াও আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, কবরের আযাব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কোনো আয়াতে উল্লেখ নেই। তারপরও যদি কেউ বলে সকল অপরাধীদের জন্যই কবরের আযাব হবে, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, ধরুন, প্রথম শিংগায় ফুৎকার দেওয়র পর একজন ব্যক্তির মৃত্যু হলো (সূরা-জুমার, আয়াত-৬৮)। তার পরে ২য় শিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নির্জীব কবরস্থ রহিল। ২য় শিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পর সে দন্ডায়মান হইল। (সূরা-জুমার, আয়াত-৬৮)। অর্থাৎ ২য় শিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পর তার দেহে আত্মা সংযোজন করা হলো। (সূরা-তাকভীর, আয়াত-৭)। এইভাবে তাকে কবর থেকে পুনরুজ্জীবিত করা হইল। (সূরা-আবাসা, আয়াত-২২)। তখন তার কবর উন্মোচিত করা হইল। (সূরা-ইনফিতর, আয়াত-৪)। (সূরা-হজ, আয়াত-৭)। (সূরা-আদিয়াত, আয়াত-৯)। এবং তখন কবর থেকে উঠিয়া সকলে প্রভুর দিকে দৌড়াইতে থাকিবে। (সূরা-ইয়াছিন, আয়াত-৫১)। (সূরা-মাআরিজ, আয়াত-৪৩)। যেন তারা পঙ্গপালের মত কবর থেকে বাহির হতেছে। (সূরা-ক্বামার, আয়াত-৭)। তারপর শেষ বিচার শুরু হবে, এই বর্ণনা মোতাবেক রোজ কেয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে যারা মারা গেল তাদের তো কবরে কোনো আযাবের বর্ণনা এখানে আসে নি। কারণ কবর থেকে জীবিত হওয়ার পরওতো বিচারের জন্য চলে গেল। তাদের জন্যতো কবরে জীবিত করে উক্ত ৩টি প্রশ্ন করা হইল না কিংবা তাদের কবরে কোনো শাস্তির বিষয়ে উল্লেখ নেই। তাহলে দেখা গেল ১ম শিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পূর্ব মুহূর্তে যিনি মারা গেলেন তাকে আর কবরের আযাব ভোগ করা লাগল না। পক্ষান্তরে (প্রচলিত ধর্ম দর্শন মোতাবেক) যখন আদম (আ.) এর একজন সন্তান সে সময় সে মারা গেল এবং কবরস্থ হলো, এবং তাকে কবর থেকে পুনজ্জীবিত করে উক্ত ৩টি প্রশ্নের মাধ্যমে ইমান পরীক্ষা করতঃ সে যথার্থ উত্তর দিতে না পারায় তার কবরের আযাব শুরু হয়ে গেল এবং ১ম শিংগায় ফুৎকার দেওয়ার দিন পর্যন্ত আযাব ভোগ করল, তাহলে আল্লাহ পাকের নিয়মের বৈষম্যের কারণে একজন দীর্ঘদিন কবরের আযাব দ্বারা আক্রান্ত হইল আর একজন রোজ কিয়ামতের দিন মারা গেল, তিনি কবরের আযাব ছাড়াই সেদিন প্রভুর কাছে দন্ডয়মান হইল। সেক্ষেত্রে আল্লাহর নিয়মের বৈষম্যতা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু না আল্লাহ পাকের নিয়মের কোনো পরিবর্তন নেই। (সূরা-বণি ইসরাইল, আয়াত-৭৭)। কারণ সকল বনি আদমের যাত্রা একই সময় থেকে শুরু এই মর্মে আল্লাহ বলেন, 'আমি কি তোমাদের প্রভু নহি'? তখন সকলেই স্বীকার করল, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের প্রভু।(সূরা-আরাফ, আয়াত-১৭২)। আর সেই থেকেই জীব জগৎ শুরু। যিনি প্রথম শিংগায় ফুৎকার দেওয়ার মুহূর্তে মারা গেল, তার যাত্রাও শুরু হয়েছিল ১ম থেকেই। সে জন্ম জন্মান্তরে বিভিন্ন জনমে শাস্তি ভোগ করে সেই দিন পর্যন্ত পৌঁছেছে বিধায় সকলের জন্য একই নিয়ম বা পদ্ধতি। আর সেটাই হচ্ছে জন্মান্তরবাদ পদ্ধতিতে আলমে বরযখে শাস্তি প্রদান। আসলে কবর বলতে মৃত্যুর পর হতে পুনর্জীবিত হওয়া পর্যন্ত এই নির্জীব অবস্থাকে বলে। অর্থাৎ মৃত্যুর পরের অবস্থা কবর। (সূরা-আবাসা, আয়াত-২১)।
এর পর আল্লাহ যখন ইচ্ছা তাকে পুনরুজীবিত করেন। (সূরা-আবাসা, আয়াত-২২)। তাহলে বুঝা গেল মৃত্যুর পর কিছুটা সময় নির্জীব অবস্থায় থাকছে। আর এটাকেই কবর বলা হচ্ছে যেহেতু নির্জীব অবস্থায় কোনো কিছু ইমান পরীক্ষা করা বা শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়। বিধায় কবরে ইমান পরীক্ষা করা ও আযাবের ঘটনা ভিত্তিহীন। কারণ যেহেতু মৃত্যুর পরে কবর থেকে পুনঃজীবিত করা হচ্ছে, তাহলে পুনঃজীবিত করার পরে সে আর কবরে থাকছে না। কারণ পুনঃজীবিত করে তাকে প্রভুর কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে (সূরা-আনাম, আয়াত-৩৬)। সেখানে ইমান পরীক্ষা করার পরে পুনরায় তাকে কবরে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না বিধায় এতে প্রমাণিত হয় যে, কবরে কোনো ইমান পরীক্ষা করা ও আযাব দেওয়া কোনটাই হচ্ছে না। এখানে উল্লেখ্য যে, মৃত্যুর পর পরই তাকে পুনঃজীবিত করে প্রভুর কাছে প্রত্যান্যিত করা হচ্ছে, তখন তার ইমান ও পূর্বকর্ম পরীক্ষা করার পর তার কর্মের প্রতিদান প্রদান করা হবে। (সূরা-হুদ, আয়াত-১১১)। এই লক্ষ্যে তাকে নতুন ভাবে সৃষ্টি করে পুনরায় সৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। (সূরা-আরাফ, আয়াত-২৯)। (বিঃ দ্রঃ- এই পুস্তকে জন্মান্তরবাদ অধ্যায়ে এই বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন) এই ভাবে পুনঃ সৃষ্টির মাধ্যমে তাকে পূর্ব জনম থেকে আড়াল করা হবে, যাতে সে পূর্ব জনমের কোনো স্মৃতি স্মরণ করতে না পারে। এই জন্য আল্লাহ বলেন, 'তাদের সম্মুখে বরযখ থাকিবে পুনঃজীবিত হওয়ার দিন পর্যন্ত' (সূরা-মমিনুন, আয়াত-১০০)। এই আয়াতে বরযখ শব্দ এসেছে, বরযখ শব্দের অর্থ দুই বস্তুর মধ্যস্থিত প্রতিবন্ধকতা। অর্থাৎ পূর্ব জনম ও পরবর্তী জনম এর মধ্যে একটি প্রতিবন্ধকতা। (আরবি অভিধান পৃ. ৬৭১)। এখানে উল্লেখ্য যে, অনেকের ধারণা বরযখ বলতে কবরকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু না, কবর শব্দ এবং বরযখ শব্দ দুইটিই আরবি শব্দ। আর এই দুইটি শব্দই পবিত্র কুরআনে এসেছে। কবর শব্দ এসেছে সূরা তওবার ৮৪ নং আয়াত থেকে, আর বরযখ শব্দ এসেছে সূরা মমিনুন আয়াত-১০০ থেকে (সুরা রহমান-১৯)। দুইটি শব্দ, দুইটি আয়াত, আর দুইটি আয়াতের দুইটি উদ্দেশ্য, অর্থও দুইটি। কবর শব্দের অর্থ হচ্ছে নীচু ভূমি বা সমাধি (আরবি অভিধান পৃ. ১৯১৯ )। তাহলে দেখা গেল কবর ও বরযখ শব্দের অর্থ এক নয়। সে ক্ষেত্রে যদি কেউ বরযখ শব্দ দিয়ে কবরকে বুঝায় তাহলে বরযখ শব্দের যে আয়াত সেই আয়াতের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। সূরা মমিনুন আয়াত-১০০ এর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। আল্লাহর কোনো আয়াতকে ব্যর্থ করা যাবে না। (সূরা-হজ, আয়াত-৫১)। কাজেই বরযখ শব্দ দিয়ে কবরকে বুঝানো যাবে না। এখানে উল্লেখ্য যে, ইমান পরীক্ষার পরে তার প্রতিদান প্রদান করার লক্ষ্যে আলমে বরযখে পাঠানো হচ্ছে, (সূরা মমিনুন আয়াত-১০০) এখানে উল্লেখ্য যে, যেহেতু এই আয়াতে কবরের কথা উল্লেখ নেই, তাতে প্রমান হয় যে, কবর থেকে পুনঃজিবীত করে প্রভুর কাছে নিয়ে গিয়ে ঈমাণ পরীক্ষার পর তাকে আর কবরে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না, যদি কবরে ফেরত পাঠানো হতো তাহলে উক্ত আয়াতে 'তোমাকে বরযখে রাখা হবে' এ কথাটি না বলে 'তোমাকে কবরে রাখা হবে, পরবর্তী পুনঃজীবিত হওয়ার দিন পর্যন্ত' কিন্তু এমনটি বলা হয় নি বিধায় প্রমাণিত হয় যে, তাকে আর কবরে পাঠানো হয় নি। তাই কবরে কোনো আযাব বা শাস্তি কিছুই হচ্ছেনা, বরং কবর একটি নির্জীব অবস্থা। তা ছাড়া যখনই পুনঃজীবিত করা হচ্ছে, তখন সে আর কবরে থাকছে না। এখানে উল্লেখ্য যে, অনেকেই বলবে মৃতুর পরে পুনঃজীবিত করে যখন আল্লাহর কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন কোনো শরীরে নিয়ে যাওয়া হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ঊাবৎু ড়হবং যধং ঃড়ি নড়ফু, ঙহবং ঢ়যুংরপধষ নড়ফু, ড়ঃযবৎং ধংঃৎধষ নড়ফু. প্রত্যেকের দুইটি দেহ, একটি শারিরীক ও অপরটি হচ্ছে আত্মীক দেহ বা জতিষ্ময় দেহ। মৃত্যুর পর প্রভুর কাছে শারিরীক দেহ তথা ঢ়যুংরপধষ নড়ফু যাচ্ছে না এটা ধ্বংসশীল। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে এটা ধ্বংস হয়ে যায়। কতটা পানিতে কতটাবা মাটিতে, কতেকটা বাষ্পীয়ভাবে ধবংস হয়। মৃত্যুর পরে পুনঃজীতিব করে ধংঃৎধষ নড়ফু বা আত্মিক দেহে তাকে প্রভুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। যেমনটি আমরা নিদ্রা নামে মৃত্যুর সময় কিছুটা বুঝতে পারি। কারণ নিদ্্রাটাও এক প্রকার মৃত্যু। (সূরা-জুমার, আয়াত-৪২)।
সূরা-আনআম, আয়াত-৬০)। নিদ্রার সময় রুহুটা শারিরীক দেহে বিছানায় থেকে যায়, আর নফসটা আত্মিক দেহ ধারণ করে বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করে। ইসলামি ফাউন্ডেশন টিকা নং- ১৫০১। ঠিক মৃত্যুর পরে মানুষের শারিরীক দেহটা ধ্বংস হয়ে যায় আর তাকে পুনঃজীবিত করে তার আত্মিক দেহটা প্রভুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।( সূরা-আনআম, আয়াত-৩৬)। এখন আমরা জানব কিভাবে মানুষের ইমান পরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেক জীবের মৃত্যুর পর পুনঃজীবিত করে তাকে প্রভুর কাছে প্রত্যানিত করা হবে। সূরা-আনআম, আয়াত-৩৬)। (সূরা-সেজদা, আয়াত-১১)। সূরা-(আনআম, আয়াত-৬২)। তখন তার সম্মুখ থেকে সকল পর্দা উন্মোচিত হবে এবং তার দৃষ্টি প্রখর করা হবে (সূরা-কাফ, আয়াত-২২)। তখন প্রভুর দিকে সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে (সূরা-কিয়াম, আয়াত-২৩)। সেদিন কাফিররাও স্পষ্টভাবে আল্লাহকে দেখতে পাবে। (সূরা-মরিয়ম, আয়াত-৩৮)। তখন বলা হবে মৃত্যুর পুর্বে তোমরা যা কিছু (দেখিতে) কামনা করতে আজ সব দেখলেতো? (সূরা-ইমরান, আয়াত-১৪৩)। তখন তারা বলবে আমরা সব দেখলাম এবং শুনলাম এবং প্রভুকে বিশ্বাসও করলাম। (সূরা-(সেজদা, আয়াত-১২)। তখন বলা হবে তোমাদের আজকের বিশ্বাস কবুল করা হবে না (সূরা-সেজদা, আয়াত-২৯)। তবে যারা পূর্ব থেকে (এহেন দেখে) বিশ্বাসী ছিল তাদেরটা বিশ্বাস কবুল করা হবে। (সূরা-আনআম, আয়াত-১৫৮)। তখন তারা আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি প্রদর্শন করবে। (সূরা-নাহল, আয়াত-১১১)। এবং বলবে হে প্রভু আমরাতো পূর্ব থেকেই বিশ্বাসী ছিলাম। (সূরা-সেজদা, আয়াত-১২)। তখন বলা হবে, তোমরা বিশ্বাসী ছিলে বললেই তোমাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে না ইমান পরীক্ষা না করে। (সূরা-আনকাবুত, আয়াত-২)। শুধু মৌখিক ইমান পরীক্ষা করবে না, বরং ইমান অনুসারে পূর্ব কর্ম পরীক্ষা করা হবে। (সূরা-ইউনুস, আয়াত-৩০)। আর এমন একটি কঠিন পরীক্ষা করা হবে, যে পরীক্ষায় কারা প্রকৃতপক্ষে ইবলিসের অনুসারী ছিল, তারা ধরা পড়বে। (সূরা-কালাম, আয়াত-৬)। আর সেই পরীক্ষাটি এমন ্একটি কঠিন পরীক্ষা হবে যে, সেথায় শুধু যালিমরাই আক্রান্ত হবেনা (বরং নামধারী, লেবাসধারী মমিনরাও আক্রান্ত হবে।) (সূরা-আনফাল, আয়াত-২৫)। তখন আকৃতি বিশিষ্ট আল্লাহর পায়ে সেজদা দিতে বলা হবে, তখন তারা সেজদা দিতে সক্ষম হবে না।(সূরা-কালাম, আয়াত-৪২)। কারণ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তাদেরকে আহ্বান করা হয়েছিল ঐ সেজদা করতে, (অর্থাৎ আকৃতি বিশিষ্ট আল্লাহর পায়ে) তখন তারা ঐ সেজদা করে নি। (সূরা-কালাম, আয়াত-৪৩)। এইভাবে আল্লাহর পায়ে সেজদার মাধ্যমেই তার পরীক্ষা করেই ইবলিস এবং ইবলিসের অনুসারীদেরকে প্রতিহত করা হবে। কারণ ইবলিসতো আদম কাবায় সেজদা না দিয়েই কাফের। (সূরা-বারাকা, আয়াত-৩৪)। তখন তাদেরকে কর্মফল অনুসারে প্রতিদান দেওয়া হবে। (সূরা-হুদ, আয়াত-১১১)। এই লক্ষে তাদেরকে পুনরায় সৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রথম বার যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল। (সূরা-আরাফ আয়াত-২৯)। এভাবে জন্ম জন্মান্তরে চলতে থাকবে। (এই বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন, এই পুস্তকের জন্মান্তরবাদ অধ্যায়ে।) এইভাবে সৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তাদের কর্মের প্রতিদান দেওয়া হবে। বিনাদোষে কেউ শাস্তি পেতে পারে না। তবে পুনঃসৃষ্টির এই জীবনটায় পূর্ব জন্ম থেকে অন্তরালে। আর এই জগৎটাকে আলমে বরযোখ বলা হয়। আর তাই আযাবটা কবরে নয় বরং আলমে বরযোখে। অতএব, সেই দিবস আসার পূর্বেই অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বেই প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আদম কাবায় সেজদা দিয়ে মৃত্যু বরণ করতে হবে। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, সেই দিবস আসার পূর্বেই তোমরা প্রভুর আহ্বানে সাড়া দাও। (সূরা-শুরা, আয়াত-৪৭)। কাজেই কোরআন মোতাবেক যারা আখেরাত বিশ্বাস করেনা, বরং হাদিস অনুসারে বিশ্বাসী ছিল, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ যারা কোরআন মাফিক আখেরাত বিশ্বাস করে না তারা মমিন ছিলনা। বিধায় তারা ক্ষতির ভিতর নিমজ্জিত। (সূরা-আছর, আয়াত-১)।