পুলিশের প্রবিধানের ১০৮ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত পয়েন্ট "সরকারী নীতি সমালোচনা নিষিদ্ধ (১৮৬১ সালের ৫নং আইন): একজন অফিসার জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে নিজস্ব মতামত গঠন করিতে পারিবেন। কিন্তু সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন নীতি বা কার্যক্রম অনুমোদন করিয়াছেন বলিয়া তিনি বিশ্বাস করিয়া থাকিলে সেই সম্পর্কে তিনি কোন আক্রমণাত্মক মন্তব্য প্রকাশ করিতে পারিবেন না এবং লিখিত বা মৌখিকভাবে সরকারী নীতি সম্পর্কে কোন মত প্রকাশ করিবেন না। কোন অফিসার আদিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সরকারের কোন নির্দেশ পালনে ইচ্ছুক না হইলে ঊর্ধ্বতন অফিসারের নিকট নিজের মনোভাব জ্ঞাপনের পর হয় উক্ত আদেশ আনুগত্যের সহিত নীরবে পালন করিবেন, নয়তো চাকুরী হইতে ইস্তফা দিবেন। ইহা ব্যতীত এই ব্যাপারে আর কোন পথ তাহার জন্য খোলা নাই।" (অর্থাৎ, "চাকুরীরত অবস্থায় কোন অবস্থাতেই নির্দেশ অমান্য করতে পারবে না") - পুলিশ আন্দোলনে যে কয়েকটি দফা আছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। এই দফাটি সংস্কার না হইলে পুলিশ কখনোই রাজনৈতিক প্রভাত মুক্ত হতে পারবে না, অর্থাৎ ব্যক্তিগত কোন নৈতিকমতের প্রকাশ/ প্রয়োগ করতে পারবে না। আশ্চর্যের বিষয় হল, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল বিরোধী দলই এই সংস্কার চাইত/চায়/চাইবে, কিন্তু তারাই আবার ক্ষমতায় গেলে (সরকার/ সরকারিদল) এই সংস্কার চায় না। সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানই সরকারের অনুগত থাকে, সরকারি এজেন্ডা/ ইশতেহার বাস্তবায়ন করে। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে অফিসের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখা ছবির পরিবর্তন। কিন্তু পুলিশের কাজটা দৃষ্টিগোচর হয় বেশি, কারণ পুলিশকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে যে কোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। তারা ডিসিপ্লিন জব করে। তারা এ ধরনের কমান্ড কখনোই ডিনাই করতে পারেন না, এমনকি নিজেদের গ্রেডিং, বৈষম্যপূর্ণ বেতন-ভাতার জন্যও কখনোও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিবাদ/ আন্দোলন/ মানববন্ধন/ সমাবেশ করতে পারেন না। বাংলাদেশ পুলিশে এসআই পদে নিয়োগের জন্য সর্বশেষ দুটি সার্কুলারের ভিত্তিতে যে সমস্ত এসআই নিয়োগ হয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র (যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, এমবিবিএস পাস, ইত্যাদি)। এনাদের চাকরির বয়স থাকা অবস্থায় যদি কোটা সংস্কার হইতো তাহলে বেশিরভাগই বিসিএস ক্যাডার হইত। "কোটা সংস্কার আন্দোলন" আগে হইলেও তা সফল হইতো না। কারণ, এটা একটা প্রেক্ষাপট। আর, চরম বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশের প্রতি শুধু ভালোবাসা কখনোই অপরাধ (চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি, খুন-খারাপি) কমাবে না। এজন্য দরকার কিছুটা ভীতি। সাইকোলজি বলে, কিছুদিন সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে অতিউৎসুকরা/ একটা শ্রেণী তাদেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করবে অহেতুক। পুলিশ সারাজীবন জনগণের একদম সন্নিকটে থাকে (অ্যাভেলেবল) সে কারণে তাদের প্রতি জনগণের সম্মান, ভয় ও গুরুত্ব কম। পুলিশ নিষ্ক্রিয় হলে, চাকুরীজীবী, সাধারণ জনগণ, নেতারা সবাই অরক্ষিত হয়ে যাবে এবং ছিনতাইকারীরা কষ্ট করে রাস্তায় ছিনতাই করতে যাবে না, মানুষের ঘরে ঢুকেই ছিনতাই করবে। আর, আন্দোলনে যে কতিপয় অতিউৎসাহী পুলিশ বেশিবেশি করে ফেলেছে, শুধু তো তাদেরকেই মারা হয়নাই, তাদের সাথে সাথে অনেক সৎ, ভাল পুলিশদেরকেও হত্যা করেছে। উল্লেখ্য, ভিডিও ফুটেজ গুলোতে দেখা গেছে, হত্যাকারীদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা খুবই কম ছিল। এ সমস্ত বিষয় নিয়ে এনালাইসিস করুন, পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরে নিয়ে আসার পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরে আনতে না পারলে অপরাধ কখনোই কমবে না।
