★ইনশাআল্লাহ কখন ও কেন বলবেন? ইসলামী পরিভাষাগুলোর একটি ‘ইনশাল্লাহ’। এর অর্থ হলো, যদি আল্লাহ চান অথবা আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে এই কাজটি করা সম্ভব। ভবিষ্যত বা আগামীতে কোনো কাজ করার আগে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করতে হয়। আরবি উচ্চারণ- اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ...وَ لَا تَقُوۡلَنَّ لِشَایۡءٍ اِنِّیۡ فَاعِلٌ ذٰلِکَ غَدًا اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰهُ কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলো না যে, ‘আমি ওটা আগামীকাল করব’। ইন শাআল্লাহ (আল্লাহ ইচ্ছা করলে) এই কথা না বলে; যদি ভুলে যাও, তবে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ করো ও বলো, ‘সম্ভবত, আমার প্রতিপালক আমাকে এ অপেক্ষা সত্যের নিকটতম পথ নির্দেশ করবেন।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত ২৩-২৪) এই আয়াতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার উম্মতকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতকালে কোনো কাজ করার ওয়াদা বা স্বীকারোক্তি করলে এর সাথে ‘ইনশাআল্লাহ’ বাক্যটি যুক্ত করতে হবে। কেননা, ভবিষ্যতে জীবিত থাকবে কিনা তা কারো জানা নেই। জীবিত থাকলেও কাজটি করতে পারবে কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই। কাজেই মুমিনের উচিত মনে মনে এবং মুখে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আল্লাহর উপর ভরসা করা। ভবিষ্যতে কোন কাজ করার কথা বললে এভাবে বলা দরকার-- যদি আল্লাহ চান,তবে আমি এ কাজটি আগামী কাল করব। ইনশাআল্লাহ বাক্যের অর্থ-তাই।অ
★ঘুমানোর পূর্বে দোয়াঃ اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا (আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।) হে আল্লাহ! আমি আপনারই নামে মরি এবং জীবিত হই। বুখারী - ৬৩২ ★ঘুম থেকে উঠার দোয়াঃ الحمدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُورُ (আলহামদুল্লিহ-হিল্লাযী আহইয়ানা বা'দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।) আল্লাহ তা'আলারই সকল প্রশংসা যিনি আমাদের (নিদ্রা জাতীয়) ওফাত দেয়ার পর আবার নতুন জীবন দান করেছেন। আর সর্বশেষে তাঁরই কাছে আমাদের পুনরুত্থান হবে। বুখারী- ৬৩২৪, ৬৩২৫
★টয়লেটে প্রবেশের আগে ও পরের দোয়াঃ ১. টয়লেটে প্রবেশের আগে হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টয়লেটে প্রবেশের সময় বলতেন- اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট তথা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি) অন্য বর্ণনায় এসেছে- হজরত আলি ইবনু আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, টয়লেটে ঢুকার সময় জিনের চোখ ও আদম সন্তানের গোপনীয় অঙ্গসমূহের মধ্যে অন্তরাল সৃষ্টি করতে চাইলে; বলতে হবে- بِسْمِ اللهِ উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি’ অর্থ : আল্লাহর নামে। (তিরমিজি) সুতরাং টয়লেটে প্রবেশের সময় এভাবে দোয়া করা- بِسْمِ اللهِ اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।’ অর্থ : ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট তথা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ) ২. টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর দোয়া হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন- > ﻏُﻔْﺮَﺍﻧَﻚَ উচ্চারণ : ‘গোফরানাকা।’ অর্থ : (হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই।’ (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ) এভাবেও দোয়া করা যেতে পারে- > غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ উচ্চারণ : ‘গোফরানাকা আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।’ অর্থ : ‘(হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই। সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য; যিনি ক্ষতি ও কষ্টকর জিনিস থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছেন।’ সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, টয়লেটে প্রবেশের আগে এবং টয়লেট থেকে বের হওয়ার পরে হাদিসে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে দুষ্ট পুরুষ ও নারী জিনের বদ-নজর থেকে হেফাজত থাকা। টয়লেটের পর কষ্টদায়ক অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও শুকরিয়া আদায় করা। ইনশাআল্লাহ্। আলহামদুলিল্লাহ্।
★খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে কী করবেন? ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু করা সুন্নাত। আর তাতে রয়েছে অনেক বরকত ও কল্যাণ। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু করলে শয়তান সে খাবার অংশগ্রহণ করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে যায়, ওই ব্যক্তির সঙ্গে শয়তান আনন্দের সঙ্গে খাবার খেতে থাকে। আর সে খাবারে বরকত থাকে না। খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে, স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি দোয়া পড়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবি (সাঃ)। হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ খাবার খেতে বসলে যেন- بِسْمِ الله ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার শুরু করে। সে যদি প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তবে (স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে) যেন বলে-بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُউচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’অর্থ : ‘খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম শেষেও আল্লাহর নাম।’ আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব বৈধ কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ার তাওফিক দান করুন। ভুলে গেলে স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাদিসে উল্লেখিত ছোট্ট আমলটি যথাযথভাবে করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
★খাবার গ্রহণের ২৯টি আদবঃ ১> খাবারের আগে-পরে উভয় হাত ধোয়া ২> খাবারের সময় আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা৷ ৩> খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা এবং খাবারের শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা৷ ৪> খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়েছে কী না জানা না থাকলে, নিজে বিসমিল্লাহ বলে খানা শুরু করা৷ ৫> ডান হাতে খাবার খাওয়া৷ ৬> ওজর ছাড়া বাম হাতে খাওয়া নিষেধ৷ ৭> তিন আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া৷ প্রয়োজনে অধিক ব্যবহার করার অনুমতি আছে৷ ৮> আঙ্গুল এবং প্লেট চেটে খাওয়া৷ ৯> খানা পড়ে গেলে তা তুলে পরিস্কার করে খেয়ে নেওয়া৷ শয়তানের জন্য রেখে না দেওয়া৷ ১০> পুরোপুরি পেট ভর্তি করে না খাওয়া৷ ১১> একটি করে খাওয়া যায় এমন খাবার খাবারের অন্য সাথীরা অনুমতি না দিলে, একটি করে খাওয়া৷ যেমন, খেজুর, বাদাম, বুট ইত্যাদি৷ ১২> খাবার খাওয়ার সময় বিনয়ী হয়ে বসা। ১৩> হারাম খাবারের মজলিসে না বসা৷ ১৪> টেবিলে না খেয়ে দস্তরখানে খাবার খাওয়া৷ ১৫> খাবারের মধ্যখান থেকে না খাওয়া৷ ১৬> ওজরের কারণে দাঁড়িয়ে খাওয়ারও অনুমতি আছে৷ ১৭> খাবারের দোষ না ধরা৷ চাহিদা থাকলে খেয়ে নেওয়া৷ অন্যথায়, না খাওয়া৷ ১৮> একসাথে বসে খাবার খাওয়া৷ ১৯> একসাথে খাবার গ্রহণের সময়, বয়সে ও ইলমে যিনি বড়, তাঁর মাধ্যমে খাবার খাওয়া শুরু করা৷ ২০> স্বর্ণ-রোপার পাত্রে খাবার-পানীয় গ্রহণ করা হারাম৷ ২১> গরম খাবার ঠান্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা৷ ২২> অপচয় ও কৃপণতা পরিহার করা৷ ২৩> খাওয়ার আগে ওজু করা মুস্তাহাব নয়৷ ২৪> খাবার উপস্থিত, সাথে চাহিদাও অনেক- এমন সময় নামাজের আগে খানা খেয়ে নেওয়া৷ খাওয়ার পর নামাজ পড়া৷ ২৫> নিজের সামন থেকে খানা খাওয়া৷ ২৬> খাবারের গরম ভাব চলে যাওয়ার পর, খাবার গ্রহণ করা মুস্তাহাব৷ ২৭> গোশত খাওয়ার দ্বারা ওজু ভেঙে যায় না৷ ২৮> প্রতিযোগী খাবারদাতার খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা৷ ২৯> খাবারের সময় দুনিয়াবী কথাবার্তা না বলে, দীনি আলোচনা করা মুস্তাহাব৷ সূত্র: ফাসলুল খিতাব লিজজুহদ