মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রাম। "দেলুয়া" আমাদের গ্রাম।
www.google.com...
এই গ্রামের নিতান্তই সহজ-সরল ও দরিদ্র পরিবারের কর্তা-কত্রী হল খাইরুল ইসলাম খান্নু এবং পরিস্কার বিবি। তাদের ৫ জন কন্যা সন্তানও রয়েছে। খান্নু চাচা তার কর্মজীবনে প্রথমে মহিষের গাড়ি দিয়ে মালামাল পরিবহনের কাজ করত। অবশ্য এটা তাদের পারিবারিক পেশা হিসাবেই পরিচিত ছিল। কারন, তিনি ছাড়াও তার আরও দুই ভাই এই পেশায় নিয়োজিত ছিল। বড় পরিবার নিয়ে কোন রকমেই তাদের দিন কাটত। আর্থিক স্বচ্ছলতা আনার জন্য তারা আখের মৌসুমে পরিবহনের কাজ বাদ রেখে আখ মাড়াই করে রস ও তা থেকে আখের গুড় বানানোর কাজ করত যেখানে পারিশ্রমিকটা একটু বেশিই পেত। মূলতঃ এভাবেই খান্নু আর পরিস্কার বিবির সংসার আল্লাহর কৃপায় চলে যেত।
বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির মহাকর্ষতায় পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল। মালামাল পরিবহনের জন্যে গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ির বদলে ভ্যান , রিক্সা চলে আসল। আখ মাড়াইয়ের কাজও এখন শ্যালু ইঞ্জিণ চালিত যন্ত্রে হওয়ায় খান্নু চাচার মত লোকজন পেশাগত পরিবর্তনে নতুন কাজ খুঁজতে শুরু করলো।
অবশেষে শখের বশেই বিদেশী জাতের গরু দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন ও মোটাতাজা করনে একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমতঃ বিদেশী জাতের গরুর দুধ দোহন করে সেই দুধ বাজারে বিক্রি করে ভালই দিন কাটতে লাগল। আর এর সাথে গাভীর বাছুর তো থাকছেই। বছর যায় বাছুরও বড় হতে থাকে। গাভী আবার বাচ্চা দেয়। দুধ দেয়। অনেক দুধ যা ৪/৫ টা দেশি গরুর থেকে আশা করা যায়।
গাভীর ষাড় বাছুরের প্রতি একটু ভিন্নভাবে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে যত্নবান হলেন। কোনরকম ঔষধের সংস্পর্শ ছাড়াই। এজন্য ভাত, ভুষি, কুরা, ঘাস ছাড়াও বিভিন্ন ফলমূল যেমনঃ আপেল, কমলা, মাল্টা, কলা, আখের ঝুলা গুড় প্রভৃতি খাওয়ানো শুরু করলেন। এই পরিশ্রম ও সততার পুরুস্কারও তিনি পেতে থাকলেন। এর পর থেকে প্রতি বছর অন্ততঃ একটি করে ষাড় প্রতি কুরবানী ঈদের সময় বিক্রি করেন এবং দামও ভাল পান। এতে করে কয়েক বছরের মধ্যেই তার খামারের গরু নিজের এলাকাসহ ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে ব্যপক প্রশংসা পায়। গত কয়েক বছর ধরেই খান্নু চাচার গরু নিয়ে অনলাইনে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একরমের হৈচৈ ও সাড়া পরে গিয়েছে। তাদেরকে অনুসরণ করে আশেপাশের অনেকেই তাদের ভাগ্য ফিরাতে আজ সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে বিদেশী জাতের গরু মোতাতাজাকরন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। অনেকেই আবার সফলও হয়েছেন।
এবারে ঈদেও তাদের গরুটির বেশ কদর। তাই প্রতিদিন দূর দুরান্ত থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসছে তাদের গরুটা এক নজর দেখার জন্যে। সবাই যে শুধু দেখতে আসে তা নয় কেউ কেউ গরু দাম যাচাই বাছাইও করছেন। খান্নু এবং পরিস্কার বিবি এবারের গরু নিয়ে অনেক আশাবাদী। কারনঃ "একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের" অভিজ্ঞ লোকজন এসে পরিমাপ করেছে যে, এটার ওজন প্রায় ৫২ মন সাড়ে সাইত্রিশ কেজির মত। তাই দামও আশা করছেন ২২-২৫ লাখ টাকা।
আশা করছি খান্নু ও পরিস্কার বিবির তাদের পরিশ্রমের উপযুক্ত মূল্য পাবে, স্বার্থকতা পাবে গরুর প্রতি তাদের ভালবাসা।
21 окт 2024