কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বসবাস করা অভি দেশে ফিরতে মরিয়া। যে কোনো উপায়ে তিনি দেশে ফিরতে চান। আর এ জন্য কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় তিনি চেষ্টা করেছেন। প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়, সবখানেই দেশে ফেরার লক্ষ্যে চলছে তার তদবির। সম্প্রতি সরকারে বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করেও এ ব্যাপারে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি। এর আগেও ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের যাত্রা শুরুর পর গোলাম ফারুক অভি দেশে ফেরার উদ্যোগ নেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের কয়েক নেতার সহযোগিতায়। কিন্তু বিষয়টি তখন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের ওই নেতারা অভিকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে পিছু হটেন। একপর্যায়ে দেশে ফেরার জন্য ২০০৯ সালের ৯ অক্টোবর অভি রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদন করেন। সূত্র জানায়, পরের বছর ফের চেষ্টা করেন অভি দেশে ফিরতে। ২০১০ সালের ১০ আগস্ট ঢাকার হাইকোর্টে একটি রিট করেন অভির মা আমিনা বেগম। বিচারপতি মামুনুর রহমান এবং বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহানের বেঞ্চে দায়ের হয় ওই রিট। এতে অভি দেশে আসার পথে বিমানবন্দরে তাকে বাধা না দেওয়া কিংবা গ্রেফতার না করার নির্দেশ চান তিনি। রিট দায়েরের দিনই অনুষ্ঠিত হয় প্রথম দিনের শুনানি। ১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার রিটের ওপর দ্বিতীয় দফা শুনানির কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সূত্র জানায়, ২০০৬ সালেও চেষ্টা ছিল দেশে ফেরার। অভির ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মূলত বিএনপির বাধার কারণেই আসতে পারেননি তিনি। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশের সঙ্গে চরম বিরোধ রয়েছে তার। ওই বছর ২৫ জানুয়ারির আগে তিনি দেশে ফিরতে চাইলেও বিরোধিতার কারণে তিনি ফিরতে পারেননি। ঝুঁকি নিয়ে ফিরলে বিমানবন্দরেই গ্রেফতার হতেন তিনি। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের পর অবশ্য ফেরার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেনা নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের কথা ভেবে আসেননি তিনি। জানা গেছে, ২০০২ সালের ১১ নভেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ঢাকার বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে থেকে অজ্ঞাতনামা একটি লাশ উদ্ধার করে। হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। দাফন হয়ে গেলেও লাশটি তিন্নির বলে শনাক্ত হয় পত্রিকায় প্রকাশিত ছবির সূত্র ধরে। পরে ছয় তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে শুধু গোলাম ফারুক অভিকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। সিআইডির ওই সময়ের সহকারী কমিশনার মোজাম্মেল হক ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করেন। অভির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তার বরিশালের উজিরপুর থানার ধামুরা গ্রামের বাড়িতে আর ঢাকার ঠিকানায় ওই পরোয়ানা পাঠানো হয়। কিন্তু ওই ঠিকানায় তাকে পাওয়া যায়নি। অভির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকলে ভারতে পালিয়ে যান। সেখান থেকে কানাডায় পাড়ি জমান। তাকে গ্রেফতারের জন্য বিশ্বব্যাপী পরোয়ানা জারি করেছে ইন্টারপোল। ৯০-এর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পরও দীর্ঘদিন দেশের বাইরে আত্মগোপনে ছিলেন গোলাম ফারুক অভি। এ সময় তার মাথায় ছিল ডা. মিলন হত্যা মামলা। এই মামলা নিয়েই ১৯৯১ সালের ২১ মে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। ১৯৯২ সালের ১৮ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল থেকে তাকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৯৯৩ সালের ২১ আগস্ট ওই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। তিন বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালতে আপিল করে জামিন পান তিনি। প্রায় দেড় যুগ ধরে অনিস্পন্ন অবস্থায় আছে অভির সেই আপিল। পরবর্তী সময়ে ডা. মিলন হত্যাসহ দুটি হত্যা মামলায় খালাস পান তিনি। ’৯৬-এর নির্বাচনে বরিশাল-২ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন গোলাম ফারুক অভি। এমপি হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেন। রাজনীতিতেও অবস্থান শক্ত করেন তিনি। তবে এসবের কোনো কিছুই আর কাজে আসেনি ২০০১’-এর ভোটে। জেপি (মঞ্জু)’র প্রার্থী হিসেবে হেরে যান তিনি। ২০০২ সালের ১১ নভেম্বর ঢাকায় উদ্ধার হয় মডেল কন্যা তিন্নির লাশ। চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর পিলারের উপর পড়ে ছিল তা। পরিচয় না মেলায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয় তিন্নির লাশ। কয়েক দিন পর মেলে তার প্রকৃত পরিচয়। সেই সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে নেপথ্যের অনেক কাহিনী। যার সঙ্গে জড়িয়ে যায় গোলাম ফারুক অভির নাম। পত্রপত্রিকায় হয় ব্যাপক লেখালেখি। অনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে রাজি না হওয়ায় তিন্নিকে হত্যার অভিযোগ ওঠে সাবেক এই এমপির বিরুদ্ধে। তোলপাড়ের এক পর্যায়ে দেশ ছাড়েন অভি।
9 сен 2024