জিহ্বা খুবই প্রয়োজনীয় একটি নরম পেশী। শুধু কথা বলা নয়, খাবার চিবানো এবং স্বাদ গ্রহনে সহায়ক । সর্বদা সচল এই পেশীটির স্বাভাবিক রং গোলাপি। তবে, কখনও কখনও জিহ্বার চেহারা ও আকৃতি পরিবর্তন হতে পারে। জিহ্বার উপরিভাগে প্যাপিলা বা লোমশ অংশটি ফুলে যায় বা সংক্রমণ হয়। এ ধরণের সংক্রমণের ফলে জিহবার রং সাদা ছোপ ছোপ বা লাল হতে পারে।
সাদা জিহ্বা:
বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা বা তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবনের ফলে জিহবার রং সাদা হতে পারে | কয়েকটি রোগের কারনে এমনটি হয়।
১. লাইকেন প্ল্যানাস:
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে ত্বকের কোষে সংক্রমণ দেখা দেয়।প্যাঁচানো ছোপ ছোপ সাদা ঘায়ের মতো দেখা দেয়।অনেক সময় গালের নরম অংশেও ছড়িয়ে পরে।অনেকের খাবার সময় জ্বালাপোড়া করে।
২. লিউকোপ্লাকিয়া:
কিছু ভাইরাস মাধ্যমে লিউকোপ্লাকিয়া জিহবাতে দেখা দেয়।জিহবার পাশে বা উপরিভাগে সাদা রংয়ের থকথকে ঘায়ের মতো হয়।এই ঘা অনেক সময় মুখের কান্সারে রুপান্তরিত হতে পারে। সাধারণত দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের এই সম্ভাবনা থাকে।
৩. ওরাল থ্রাশ:
মুখে অনেক সময় ছত্রাক জাতীয় কিছু সংক্রমণ দেখা যায়। এটা জিহ্বার উপরিভাগে বা গালের অংশে সাদা একটি প্রলেপের মতো আস্তরণ তৈরি করে। দেখতে সাদা ও প্যাঁচানো কিছু দাগের মতো এবং লোমশ অংশ থাকে ।যেটা অনেক সময় সংক্রমনের কারণ হয়ে থাকে। । ছত্রাক জাতীয় এই সাদা অংশটি কোন কোন সময় কাপড় দিয়ে মুছে দিলেও উঠে আসে।
রেড টাং বা লাল জিহবা:
কিছু ভিটামিনের অভাবে জিহবার উপরে লাল রঙের বা চকচকে একটা আবরন দেখা যায় ।কিছু ভিটামিনের অভাবে এগুলো হয়ে থাকে।যেমন ভিটামিন বি-12,আয়রন, ফলিক এসিড ,রিবফ্লাবিন।ছত্রাক জাতীয় কিছু সমস্যার কারণে অনেক সময় জিহ্বায় লাল আবরন দেখা যায়।শরীরে ভিটামিনের স্বল্পতা পূরণ করলে সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।
জিওগ্রাফিক টাং:
পুষ্টিহীনতা বা ভিটামিনের অভাবে সাধারনত সমস্যাটি হয়ে থাকে।জিহবার উপরে সাদা ও লাল গোলাকার প্যাঁচের মত দেখা যায়। জিহ্বার উপরিভাগ দেখতে অনেকটা মানচিত্রের মতো হয়। এলারজি বা দুশ্চিন্তার কারনেও এটা হতে পারে। এছাড়া ছত্রাক জাতীয় সমস্যার কারনেও জিওগ্রাফিক টাং দেখা যেতে পারে।কোন কিছু খেতে গেলে স্বাদহীন মনে হবে, ব্যথা অনুভুত হবে। জ্বালাপোড়া হতে পারে। পুষ্টিহীনতার সমস্যা থাকলে অবশ্যই পুষ্টিযুক্ত খাবার খেতে হবে।মুখ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।শক্ত খাবার বা মশলা জাতীয় খাবার, তামাক বা মদ্য পাণের অভ্যাস থাকলে পরিহার করা জরুরি।
টাং টাই:
আমাদের মুখে জিহবা আশপাশের অংশের সাথে লেগে থাকার জন্য ফেনাম নামক এক ধরনের লিগামেন্ট দিয়ে আটকানো থাকে। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে জিহ্বার নিচের দিকে পাতলা একটা আবরন জিহ্বাটি নিচের অংশের সাথে আটকে রাখে। অনেকের ক্ষেত্রে এই আবরণটি জিহ্বার সামনের অংশ বা মাথা পর্যন্ত বড় হয়ে থাকে। এটি জন্মগত সমস্যা ।শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের দুধ পান করতে সমস্যা হয়।খাবার খেতে অসুবিধা হয়।কথা স্পষ্ট হয় না। সার্জারি করে বড় ফেনামটি ছোট করার মাধ্যমে সমধান সম্ভব।
ব্ল্যাক হেয়ারি টাং:
জিহবার উপরে লোমশ অংশ বা প্যাপিলাগুলো এক এক জায়গায় এক এক রকম অবস্থানে থাকে।কিছু সংখ্যক প্যাপিলা আছে যেগুলো ফিলিফম প্যাপিলা বলে । এই ফিলিফম প্যাপিলাগুলো অনেক সময় কিছু ব্যাকটেরিয়ার কারণে রং পরিবর্তন হয় এবং শক্ত আবরনে রুপ নেয়।এর কারনে অনেক সময় মুখের মধ্যে খসখসে অনুভুতি বা শুকনো ভাব দেখা যায়।জিহবার উপরিভাগ ফোলা মনে হতে পারে। মুখ পরিচ্ছন্ন না রাখলে এ রোগ দেখা দেয়। এন্টিবায়োটিক বেশি খেলে,চা-কফি অতিরিক্ত পানে এই সমস্যা বাড়তে পারে। বেশি নরম খাবার খেলেও এই সমস্যাগুলো দেখা যায়। এছাড়া মুখে দুর্গন্ধ ও কোন কিছু খেতে গেলে ঝাঁঝালো অনুভুতি হয়।এ ধরনের সমস্যার চিকিৎসা নিজেকেই নিতে হয়।মুখের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্যের অভ্যাস থাকলে পরিহার করতে হবে।মুখে ছত্রাক জাতীয় কোন সমস্যা থাকলে চিকিৎসা করাতে হবে।অতিরিক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে কমিয়ে আনতে হবে।
করোনার বিভিন্ন লক্ষণগুলোর মধ্যে খাবারের স্বাদ না পাওয়া,গালে জিহ্বাতে বিভিন্ন অংশে ঘা হওয়া বিশেষ করে জিহ্বাতে গ্লসাইটিস নামক এক ধরনের সংক্রমণ দেখা যায়।
#dr.sharmeen
#differenttonguediseases
#Dentalproblem
8 сен 2024