জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর না থাকলে বাঙালি গীতা-রহস্যের হদিশ পেত না। সংস্কৃত নাটকের বিপুল ভাণ্ডার অধরাই থেকে যেত। বঞ্চিত থাকত পাশ্চাত্য সাহিত্যের রস আস্বাদন থেকে। গিরিশ ঘোষের আগে বঙ্গ রঙ্গালয়ের জনপ্রিয়তাকে তিনিই গড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর কাছে বাঙালি স্বদেশিয়ানার প্রথম পাঠ নিয়েছিল। অরবিন্দ ঘোষের হাত ধরে বিপ্লবী যুগ শুরু হওয়ার অনেক আগে তিনিই প্রথম বাঙালিকে ‘গুপ্ত সমিতি’ গড়তে শিখিয়ে ছিলেন ‘হামচুপামুহাফ’ গঠনের মধ্য দিয়ে। নিজের অন্তঃপুরিকা স্ত্রী কাদম্বরীকে চিৎপুরের রাস্তা দিয়ে ইডেন গার্ডেনসে ঘোড়া ছুটিয়ে নারী স্বাধীনতা সম্বন্ধে সচেতন করেছিলেন। বাঙালিও যে চাইলে ব্যবসা করে প্রতিপক্ষ ইংরেজ ব্যবসাদারদের পাততাড়ি গোটানোর ব্যবস্থা করতে পারে, তাও প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তিনি। বিদ্বজ্জন সমাগম, সঞ্জীবনী সভা, সারস্বত সমাজ গঠনের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যসেবার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আর সেই সঙ্গে গড়ে দিয়েছিলেন বাঙালির গর্বের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।১২৫৫ বঙ্গাব্দের (৪ মে, ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দ) ২২ বৈশাখ তারিখে কলিকাতার জোড়সাঁকোস্থ ঠাকুর বাড়ীতে জন্ম গ্রহণ করেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর পঞ্চম পুত্র ও সপ্তম সন্তান। এঁর মাতার নাম সারদাদেবী। ইনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর অগ্রজ। রবীন্দ্রনাথ এঁকে সম্বোধন করতেন 'নতুন দাদা'।১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মেজভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মস্থলে আহমেদাবাদে যান এবং সেখানে সেতার এবং ফারসি ভাষা শেখা শুরু করেন।
১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে আহমেদাবাদ থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। এই বৎসরে হিন্দু মেলার দ্বিতীয় অধিবেশন হয়। নবগোপাল মিত্রের উৎসাহে, এই অধিবেশনের জন্য তিনি 'উদ্বোধন' নামে একটি কবিতা রচনা করেন। কবিতাটি পাঠ করেছিলেন হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই বৎসরের ৫ জুলাই তারিখে ইনি শ্যামলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বিতীয়া কন্যা কাদম্বরী দেবীকে বিবাহ করেন।
১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে তিনি আদি ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত 'ব্রাহ্মধর্ম বোধিনীসভা'র প্রতিষ্ঠাতা সহ-সম্পাদক ছিলেন। বাংলা ভাষার সুচারু চর্চার জন্য এই বৎসরেই তিনি 'সারস্বত সমাজ' নামে একটি সঙ্ঘ গঠন করেন। ১৮৭৪-৭৫ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু মেলার 'সংশ্লিষ্ট সম্পাদক' পদে ছিলেন। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে 'ব্রাহ্মসমাজ সঙ্গীত বিদ্যালয়ে'র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাস থেকে ভারতী নামক পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। এই বৎসরই সঞ্জীবনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি তাঁর ভগ্নিপতি জানকীনাথ ঘোষালের সাথে পাটের আড়ত খোলেন। এরপর এই আড়ত বন্ধ রেখে তিনি কিছুদিন শিলাইদহে নীল চাষ শুরু করেন। কিন্তু নীলের বাজারে পতন শুরু হলে, তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন।
১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে মে তিনি জাহাজের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু বিদেশী কোম্পানীগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় তাঁর কোম্পানি মার খায়। ফলে, অচিরেই তাঁর এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এই বৎসরের ১৯শে এপ্রিল, তাঁরএঁর পত্নী 'কাদম্বরী দেবী' আত্মহত্যা করেন। এই বৎসরেই ইনি ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক পদ থেকে অব্যহতি নেন। এরপর তিনি ব্রহ্মসঙ্গীত রচনায় আত্মনিয়োগ করেন।
#viralvideo
#biography
#jyotirindranaththakur
#bangla
#jiboni
#abpananda
3 июл 2023