প্রিয় দর্শক,
এই পর্বের মাধ্যমে আমি আলোচনা করেছি দাদার আগে বাবা মারা গেলে নাতি দাদার সম্পত্তি পাবে কিনা?
উত্তরাধিকারের বিষয়টি আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'সমস্ত দরকারি জ্ঞানের অর্ধেকই হচ্ছে উত্তরাধিকারসংক্রান্ত জ্ঞান।' মুসলিম আইনের অতিজরুরি এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, দাদার সম্পত্তিতে এতিমের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে সব সময়ই বহুমাত্রিক প্রশ্ন ও বিতর্কের উদ্ভব ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা নিম্নলিখিত কয়েকটি ঘটনা সম্পর্কে পর্যালোচনা করলেই এ ব্যাপারটি আমাদের কাছে অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঘটনা-১ : রফিক সাহেব জীবিত থাকাবস্থায় তাঁর ছেলে মারা যায়। মৃত ছেলের একটি পুত্রসন্তান আছে। তার নাম ফয়সাল। এখন রফিক সাহেব মারা গেলে তাঁর সম্পত্তিতে তাঁর নাতি ফয়সাল কোনো অংশ বা ভাগ পাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফয়সালের চাচারা তাকে তার দাদার সম্পত্তিতে প্রাপ্য পিতার অংশ থেকে বঞ্চিত করতে চাচ্ছে। ঘটনা-২ : ডাক্তার মজির উদ্দিন সাহেবের এক মেয়ে ও এক ছেলে। কিন্তু ডাক্তারের জীবদ্দশায় তাঁর ছেলে মারা যায়। মারা যাওয়ার সময় সে একটি কন্যাসন্তান রেখে যায়। তার নাম লিজা (ছদ্মনাম)। এখন প্রশ্ন ওঠে, লিজা ডাক্তার সাহেবের (দাদার) সম্পত্তিতে অংশ পাবে কি না? পেলে কতটুকু পাবেন? যেহেতু সে কন্যাসন্তান। উপরোক্ত বর্ণিত ঘটনাগুলোর সমস্যা সমাধান হিসেবে বলা যায় যে যদিও মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী দাদার আগে বাবা মারা গেলে সন্তানরা কোনো অংশ পাওয়ার অধিকারী হন না; কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ সালের ৪ ধারা অনুসারে দাদা জীবিত থাকাবস্থায় বাবা মারা গেলেও মৃত ব্যক্তির সন্তানরা দাদার মৃত্যুর পর দাদার সম্পত্তিতে অংশীদার হবে। সন্তানদের বাবা জীবিত থাকাবস্থায় যেটুকু সম্পত্তি পেতেন, সমপরিমাণ সম্পত্তি সন্তানরা পাবেন। এ ক্ষেত্রে ছেলে বা কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বৈষম্য হবে না। আবার এ ক্ষেত্রেও ভিন্ন একটি সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ আরেকটি ঘটনা পর্যালোচনা করা যেতে পারে। ঘটনা-৩ : সাজ্জাদ সাহেবের ছয় ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের নাম সালেহা বেগম। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সালেহা বেগম তাঁর একমাত্র কন্যাসন্তান কণা বেগমকে রেখে মারা যান। তার বেশ কয়েক বছর পর মারা যান সাজ্জাদ সাহেব। অর্থাৎ সালেহা বেগম মারা যান ১৯৫৫ সালে এবং তাঁর বাবা সাজ্জাদ সাহেব মারা যান ১৯৮৪ সালে। সাজ্জাদ সাহেব মৃত্যুর সময় ছয় ছেলে ও এক স্ত্রী রেখে মারা যান। তবে তাঁর মৃত্যুর সময় তাঁর নাতনি (কণা বেগম) জীবিত ছিল। এখন সাজ্জাদ সাহেবের সম্পত্তি ভাগের সময় কণা বেগম (নাতনি) সম্পত্তির অংশ দাবি করলে তাঁর ছয় ছেলে ও বিধবা স্ত্রী ঘোর আপত্তি জানায় এই ভিত্তিতে যে কণা বেগমের মা সালেহা বেগম মারা যান ১৯৬১ সালের আগে; অর্থাৎ আরো সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১ সালের এ আইনটি কার্যকর হওয়ার অনেক আগে। সুতরাং তাঁর মেয়ে কণা বেগম সাজ্জাদ সাহেবের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে অংশীদার হতে পারবেন না। এই ছিল তাঁদের আপত্তির মূল ভিত্তি। এ সমস্যা সমধানের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায় এখানে প্রাসঙ্গিক ও প্রণিধানযোগ্য। যেখানে আপিল বিভাগ (শেখ ইব্রাহীম ও অন্যান্য বনাম নাজমা বেগম, ৪৪ ডিএলআর (এডি) ১৯৯২, পৃষ্ঠা. ২৭৬) এই মামলায় বলেছেন যে 'মৃত ব্যক্তির কন্যাসন্তান ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার আগে না পরে মারা গেছেন, তা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সাকসেশন কবে ওপেন হয়েছে, সেটাই মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।' সুতরাং সাজ্জাদ সাহেব মারা গেছেন ১৯৮৪ সালে; অর্থাৎ ১৯৬১ সালের আইন কার্যকর হওয়ার পরে এবং সাকসেশন ওপেন হয়েছে তাঁর মৃত্যুর তারিখ থেকে। তাই কণা বেগম (তাঁর নাতনি) অবশ্যই তাঁর মা সালেহা বেগম বেঁচে থাকলে যতটুকু সম্পত্তি পেতেন, সেই সমপরিমাণ সম্পত্তি তিনিও পাবেন।
#সম্পত্তিবন্টন #উত্তরাধিকারআইন
Contact Information
Phone- 01671-043256
E-mail- lemon.law14@gmail.com
Facebook Page- / advocateamirhamza.lemon
Instagarm- / advocatelemon
Twitter- / advocatelemon
17 сен 2024