Rabindra Sangeet// Puja Parjaay
'তোমার দূরের গাথা'
বিশেষ পর্ব
আজ গানঘরের বিনম্র নিবেদন-
""' আছ কাছে '""
কিংবদন্তী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রাজেশ্বরী দত্তের কন্ঠে রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্যায়ের গান - "পথে যেতে ডেকেছিলে মোরে "
• পথে যেতে ডেকেছিলে মোরে...
"পাঞ্জাবি মেয়ে, ভারি মিষ্টি বাংলা বলতো৷ নিজে যে বাঙালি বউ এ কথা শুনতে তার বড়ো সুখ ছিল৷ মুখখানা হাসিতে ভ'রে যেত৷ বাংলা সাহিত্য তার প্রাণ৷ তাঁর স্বামীর প্রতিভা সে অবুঝ অন্তরে গ্রহণ করেনি৷ কিন্তু সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ওঁকে বাংলা বলতে উৎসাহ দিতেন না, বলতেন ঐ উচ্চারণ নিয়ে আর বাংলা বলে কাজ নেই৷ আমি অনেকদিন পর্যন্ত জানতাম না যে ও বাংলা বলতে পারে৷... দেখতে রাজেশ্বরী ভারি সুন্দর, আর স্বভাব ততোধিক৷ গলার আওয়াজ, কথা বলার ধরণ, মৃদুতা- সব মিলিয়ে এত স্নিগ্ধ মেয়ে কম দেখা যায়৷"- এভাবেই বান্ধবী রাজেশ্বরী দত্তের স্মৃতিচারণা করেছেন সাহিত্যিক প্রতিভা বসু৷ রাজেশ্বরীর সঙ্গে হীরাবাঈয়ের কন্ঠস্বরের মিল খুঁজে পেতেন তিনি৷ শান্তিনিকেতনে রাজেশ্বরী রবীন্দ্রসংগীত শিখেছিলেন মূলত শৈলজারঞ্জন মজুমদার, শান্তিদেব ঘোষ, ইন্দুলেখা ঘোষ প্রমুখের কাছে৷ উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন যামিনীনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে৷ গুরু শৈলজারঞ্জন মজুমদারের উপস্থিতিতেই হিন্দুস্থান কোম্পানিতে কিশোরী রাজেশ্বরী প্রথম রেকর্ড করেন রবীন্দ্রনাথের দুটি বর্ষার বর্ষার গান- 'আজি তোমায় আবার চাই শুনাবারে' এবং বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল'৷ রেকর্ডিংএ উপস্থিত ছিলেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, নীরদ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখেরা৷ পূর্বোক্ত কোম্পানি থেকেই প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর অনেকগুলি গান, যার মধ্যে অন্যতম - 'ফুল বলে ধন্য আমি', 'দিন যায় রে', 'বড়ো বেদনার মতো', 'আমার যদি বেলা যায় গো বয়ে', 'ওগো আমার চির অচেনা পরদেশী', 'এ কী করুণা করুণাময়', 'অনন্তসাগর মাঝে', 'ওগো শোনো কে বাজায়', 'বাজে করুণ সুরে', 'এ মোহ আবরণ', 'হে বিরহী, হে চঞ্চল', 'চিরসখা হে', 'নীলাঞ্জনছায়া' প্রভৃতি৷ বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় গুরু রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈতকন্ঠে গাওয়া 'আমার মাথা নত করে দাও হে' গানটির কথা৷ তবে প্রথম দিকে হিন্দুস্থান কোম্পানির সমস্যা ও পরবর্তীকালে নিজের সিদ্ধান্ত- এই দুয়ের কারণে সেভাবে মঞ্চে তিনি গান করেননি৷ অবশ্য রবীন্দ্রশতবর্ষে তিনি বিদেশে পরিবেশন করেছেন রবীন্দ্রনাথের গান- গেছেন লন্ডন, প্যারিস, রোম প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়৷ সুধীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ রাজেশ্বরী বিদেশে গিয়ে লাইব্রেরি সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেন; চাকরিও পান কেমব্রিজে৷ সেখানে দুটি বই সম্পাদনাও করেন৷ এরপর সংগীত শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন 'দ্য স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ'এ৷ তাঁর প্রখর মেধা এবং বোধের গভীরতা ধরা পড়েছে গানেও৷ তবুও এমন গুণী শিল্পীর রেকর্ড করা গানের সংখ্যা বড্ড কম- এ অনুযোগ থেকেই যায় তাঁর নিষ্ঠ শ্রোতাদের মনে৷ তবুও আত্মমগ্ন শিল্পী রাজেশ্বরী দত্তের যেটুকু কন্ঠসম্পদ আমাদের কানে এসে পৌঁছোয়, তাই রবীন্দ্রগানের অরূপরতন৷
(তথ্যঋণ- 'ওগো আমার চির-অচেনা পরদেশী'- ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়)
আজ আমাদের RU-vid Channel এর মাধ্যমে প্রথিতযশা শিল্পীর এই গানটি প্রথম শ্রোতাদের সামনে আনতে পেরে গানঘর একই সঙ্গে আনন্দিত ও গর্বিত৷
এই উপস্থাপনার মধ্য দিয়েই আমরা প্রণতি জানাই শিল্পীকে৷
বিগত শতকের শিল্পীদের গান শুনুন, শোনান এবং share করুন৷ আমাদের youtube channelটি subscribe করুন... Bell Icon press করতে ভুলবেন না৷৷
12 сен 2024