প্রশ্ন চুরি, চাকরি চুরি - বাঙালী ছেলেমেয়েগুলো কোথায় যাবে?
(১)
( লেখাটা শেষ পর্যন্ত পড়বেন প্লিজ। শেষে নতুন লাইন- নতুন কেরিয়ার নিয়ে লিখেছি )
“হোপ” বা “আশা” ছাত্রছাত্রী্দের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ন। খাটার মোটিভেশন সে পাবে কোত্থেকে- যদি টাকা ফেলে অন্যকেউ ক্ষীর খেয়ে যায়? ঘুঁশের রাজত্বে যেখানে তার হকের চাকরি, কলেজ, স্ট্রিম চুরি হয়ে যাচ্ছে- কারই বা পড়াশোনার ইচ্ছা থাকবে?
শিক্ষিত বাঙ্গালী-যার বাবার ব্যবসা নেই, জমি নেই, তাদের সামনে এখন ক্রান্তিকাল। যে পেশাগুলির দিকে সে বাল্যকাল থেকে চাতকের মতন চেয়ে থাকে-চলুন দেখি সেই পেশাগুলির অবস্থা কি!
#১ স্কুলের শিক্ষকতার চাকরি। এটাই ছিল নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পকেটশুন্য বাঙ্গালী ছেলেমেয়েদের প্রধান আশ্রয়। চাকরি চুরি হওয়ার ফলে মামলা, বেনিয়মের জটে, এখন এই নিশ্চিত আরামের কোন নিশ্চয়তা নেই! যদি জটিলতা কেটেও যায়, সুপ্রীম কোর্ট ক্লিন আপ করে-তবুও প্রচুর শিক্ষকপদে নিয়োগ হবে না। কারন অনেক সরকারি স্কুল ছাত্রাভাবে বন্ধ হচ্ছে। পার্টিগুলো ভাতা বাড়িয়ে ভোট পাচ্ছে। শিক্ষা নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের উৎসাহ নেই। কারন তারা ঘরে ঘরে শিক্ষিত বেকার দেখছে। এদিকে সরকারের লোন, রাজ্যের জিডিপির ৩৮% ক্রস করে গেছে। গত ১০ বছরে ২৮% শিক্ষক সংখ্যা কমেছে। নিয়োগ প্রায় হয় নি। যা হয়েছে-তার মধ্যে কজন জালি সেই কেস এখন হাইকোর্ট-সুপ্রীম কোর্টে। সুতরাং এই আরামের চাকরিগুলোর অস্তিত্ব নানান রাজনৈতিক কারনেই উঠে যাচ্ছে।
২ ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, নার্সিং- নিট শুরু হওয়ার পর, দেখা যাচ্ছে পরীক্ষাতে ব্যপক দুর্নীতি আগেও হয়েছে-এখনো হচ্ছে। কিছু খুব ভাল ছেলে চান্স পাচ্ছে সঠিক উপায়ে। কিন্ত আস্তে আস্তে তাদের সংখ্যা কমছে-জালি ভাবে নিটে স্কোর করা ক্যান্ডিডেটদের ভীর বাড়ছে। বাংলার জন্য ৮৫% সিট রিসার্ভড। কিন্ত বাংলায় আবার ডমিসিল বি আছে। সেই লুপহোল কাজে লাগিয়ে অন্য প্রদেশের ছেলেমেরা এখন বাংলার সরকারি মেডিকেল কলেজে ঢুকে যায়। এখনো পর্যন্ত সরকার বলছে সদিচ্ছা আছে ক্লিন করার। কিন্ত এরা পলিটিশিয়ান। না আঁচালে বিশ্বাস নেই। এখনো দেখতে পাচ্ছি না, নিট বাতিল করার কোন উদ্যোগ। বা ডমিসিল বাতিলের উদ্যোগ! সুতরাং এখনো পর্যন্ত এখানেও বাঙ্গালী ছেলেমেয়েদের জন্য ডাক্তারি লাইনে যথেষ্ট অন্ধকার!
৩ বেঙ্গল JEE : যদ্দিন আই টিতে মার্কেট চাঙ্গা ছিল, মোটামুটি যাদবপুর, কল্যানী কোথাও কিছু না কিছু আই টি চাকরি পেয়ে যেত সরকারি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এখন সেই রাম ও নেই, রামরাজ্য ও নেই। এ আই, সব ফ্রেশার আই টি চাকরি খেয়ে ফেলছে। কোর ইঞ্জিনিয়ারিং এ কম মাইনের লেবারের চাকরি আছে। সেটা কেউ করবে না! আর বেসরকারি কলেজগুলো ? তারাও সেই আই টি বুমের ওপর চলে। সেটা নেই। সুতরাং এখানে বেলুন ফুস। তবে আই টিতে চাকরি নেই তা না। স্মার্ট ছেলেমেয়েদের কোন অসুবিধা নেই। সমস্যা মধ্যম মেধার।
#৪ JEE Mains & Advanced : এখানে বাংলার ছেলেমেয়েদের পারফর্মান্স বহুদিন থেকেই খারাপ। যেখানে মেইন্স এবং এডভান্সডে, বাংলার ৮% ছেলেমেয়েদের থাকার কথা সেখানে থাকে মোটে ২%। যেহেতু এগুলোও এন টি এ কনডাক্ট করে, টাকা পয়সা লিকের গল্প থাকতে পারে। যার জন্য হয়ত, বাংলার ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত। পেছনের দিকে র্যঙ্ক করে অনেকে KIT, VIT তে পড়তে পাঠাচ্ছেন ১৮-২৫ লাখ টাকা খরচ করে। কিন্ত যেখানে IIT গুলোতেই ৪০% ছেলেমেয়েদের প্লেসমেন্ট নেই- এইসব প্রাইভেট কলেজগুলো আর কি করবে?
#৫ কেন্দ্রীয় বা সরকারি চাকরি ভুলে যান। ফলে সব সরকার, যতই মুখে বলুক-সরকারি চাকরির সংখ্যা ক্রমাগত কমাতেই থাকবে। পেনসনের ধকল কেই নেবে না। তাতে ভোট নেই, খরচ আছে। ডেমোক্রাসি মশাই! খরচ সেখানেই, যেখানে ভোট আছে।
ভাইবোনেরা, বোঝার চেষ্টা করুন। সামনের সময় খুব কঠিন।
একদিকে এ আই। বটেদের রাজত্ব।
অন্যদিকে সরকারি দুর্নীতি।
আরেকদিকে ভাতায় খাচ্ছে সরকারি চাকরি।
(২)
এতক্ষন অনেক নেগেটিভ দিকগুলো নিয়ে শুনলেন। কিন্ত বাস্তব। কোন জল নেই!
তাহলে আশার আলো কোথায়? কেন আমি হতাশ হব না??
আমি কিন্ত হতাশ না। কারন আমি এর বাইরেও অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছি। কিন্ত এই কেরিয়ারগুলো তাদের জন্য যারা সক্ষম। যারা স্কুল থেকে সঠিক প্রস্তুতি নেবে।
কোর মেকানিক্যাল, মেটালারজি, এরোস্পেস, ইলেক্ট্রিকালের প্রায় প্রতিটা সাবজেক্টেই আজকাল প্রায় লোক পাওয়া যায় না। যাদের আধুনিক হাই লেভেলের স্কিল আছে। কারন সবাই সফটোয়ারে চলে গেছে। আজকাল কোডিং বা প্রোগ্রামিং সব সাবজেক্টেই করতে হয়-কিন্ত তার সাথে কোর ইঞ্জিনিয়ারিং, বা কোর বিজনেসে গভীর জ্ঞান থাকলে, প্রচুর চাকরি। নতুন জমানায় শুধু কোডিং জেনে কেউ চাকরি পাবে না। কারন ওটা এ আই করবে। কোডিং এর সাথে ডোমেইন নলেজ এখন মুখ্য-এ আই জমানার আই টি স্কিলে এটাই নতুন ডিমান্ড। আর আই টি, ইলেকট্রনিক্সে বিজনেসের স্কোপ আরো বেশী এখন।
ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারিং এর বাইরে হেলথ ফিটনেস, নিউট্রিশন,ল্যান্ড স্কেপিং, ওল্ডার কেয়ার, নার্সিং, ডিজাইন( ফ্যাশন, ইন্টেরিয়ার, প্রোডাক্ট) ইত্যাদি অন্যান্য পেশা্তে সুযোগ বাড়ছে।
সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যারা সেলফ স্টাডি করবে, লার্নিং স্কিল টপ গিয়ারে রাখবে-প্যাশনেটলি কোন কেরিয়ারকে ফলো করবে- তাদের জন্য চারিদিকে সুযোগ। অন্ধকার শুধু তাদের সামনে, যারা টিউশনির চক্করে লার্নিং স্কিল সম্পূর্ন ধ্বংস করেছে। হান্টিং স্কিল জিরো। দুর্ভাগ্য, আজকে বাংলায় এদের সংখ্যা ৯৫% এর ওপরেই হবে। বাংলার ছেলেমেয়েদের সব থেকে বড় শত্রু টিউশনি। যা লার্নিং স্কিল সম্পূর্ন ধ্বংস করে। এটা নিয়ে আমি আমার জীবন জীবিকা বইতে অনেক লিখেছি। প্রচুর ভিডিও দিয়েছি।
বাবা-মায়েরা নাম্বার বোঝে, লার্নিং স্কিল , হান্টিং স্কিল বোঝে না। টাকার থলি নিয়ে - এদিকে ওদিকে কোন কলেজে, কোন স্ট্রিমে ভর্তি করিয়ে ভাবছে, কলেজ প্লেসমেন্ট দেবে। নিশ্চয় দেবে। সেলসে দেবে। তিনমাস বাদে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে বসে আবার ভাববে কি করা যায়। আর কি নতুন লাইন আছে! চোখের সামনে ঘরে ঘরে শিক্ষিত বেকার দেখবে, তাদের চোখের জল দেখবে- তবুও চোখ খুলবে না।
[ ভাল লাগলে শেয়ার করুন, প্রোফাইল সাবসক্রাইব করতে ভুলবেন না ]
5 окт 2024