বাইকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ভ্রমণ ।। Most Beautiful Place In Our Bangladesh ।। আমার দেখা বাংলাদেশের শেরা গ্রাম এই স্থানটি ছিল । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক চিরস্থায়ী স্থানে আপনাদের ভ্রমণ করে দেখাতে পেরে অনেক ভাল লাগছে।।
ভ্রমণের নেশা মানুষের চিরন্তন। এক দুর্বার আকর্ষণ অনুভূত হয় হৃদয়ে। সুদূরের আহ্বান আসে তার কাছে। ডাকে অরণ্য, পর্বত, সমুদ্র। সেই টান, সেই আকর্ষণ আমারও হৃদয়ে জেগে ওঠে বারবার। ছোটোবেলা থেকেই বাবা-মায়ের হাত ধরে কাছে দূরে নানা স্থানে গিয়েছি ভ্রমণে, তবে আমার কাছে সব থেকে আকর্ষণীয় হয়েছে বাংলাদেশের গ্রাম গুলি।
মানুষ সুদূরের পিয়াসী । উষর মরু পেরিয়ে, দুর্গম হিমালয় জয় করে, অরন্যে মশাল জ্বেলে পথ খুঁজে আজীবন সে বেড়াতে ভালোবাসে। মনুষ্য জন্মে আমি নিজের রক্তেও অনুভব করেছি সে বেড়ানোর নেশা । ছোটোবেলা থেকে অনেকবার পাহাড় দেখেছি, জঙ্গল দেখেছি কিন্তু বাংলাদেশের এমন সুন্দর গ্রাম আগে কখোন দেখিনি।
বাংলাদেশের প্রান তার প্রাচীন শস্যশ্যামলা, নদী দিয়ে ঘেরা এদেশের সঠিক জীবনকে যদি অনুভব করতে হয়, তাহলে তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে শহরের বিষাক্ত নিশ্বাস থেকে দূরে কোনো অচিনপুরে।
গ্রামের ছোটো ছোটো কুঁড়েঘরগুলি গাছালির সবুজ বনানীতে ছাওয়া। গ্রামের গেরুয়া রাঙা আঁকা-বাঁকা পথ গ্রাম ছাড়িয়ে শহরের যাবার পথে মিশে গেছে। মরনে ফাকা মাঠ, সবুজ ঘাস, গাছপালা, বিরাট আকাশ, নদীর কল্লোল, পাখির গান। এই খোলা-মেলা উন্মুক্ত পরিবেশে এটা যেন ভরে গেল। গ্রামের সকালটি বড়োই মধুর আবার সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁর শব্দে নিবিড় হয়ে আসে পল্লি প্রকৃতি। তখন বরের বৈদ্যুতিক আলোয় উজ্জ্বল পরিবেশের কথা মনে পড়লেও গ্রামের পরিবেশটি যেন বড়োই শান্ত মনে হচ্ছিল। বনধারণের জন্য টাটকা ফলমূল, শাকসবজি পল্লিগ্রামে প্রচুর, দেখলাম শস্য পরিপূর্ণ ধানখেত।
গ্রামটিতে প্রায় সারা বছর আনন্দ উৎসব লেগে থাকে। বাঙালির বারমাসে তেরো পার্বণ শহরে আমরা সেভাবে না অনুভব করলেও গ্রামে সবসময়ই তাঁর ছোঁয়া লাগে। সবাই আনন্দ উপভোগ করে। পুজোপলক্ষ্যে যাত্রানুষ্ঠান ও মেলা বসে। বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ। ৬৮ হাজার গ্রাম নিয়ে আমাদের এই বাংলাদেশ গঠিত। বাংলাদেশের প্রকৃতি যে কতটা সবুজ শ্যামলে ঘেরা তা বোঝা যায় একমাত্র শহরের বিষাক্ত নিঃশ্বাস এবং কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থেকে। তাই পড়াশোনার ফাঁকে যখন ছুটি পাওয়া যায় তখন ইচ্ছে করে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখতে। সৃষ্টিকর্তা গ্রামকে যেন সাজিয়েছেন তার নিজস্ব রূপ রস এবং গন্ধ দিয়ে তবে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে গ্রামেও অনেকটাই শহরের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এরপরেও গ্রাম সুন্দর, শস্য-শ্যামলে ভরা, নির্মল বায়ু প্রবাহিত হয় প্রতিনিয়ত তাই গ্রামে গেলে মন নিমিষেই ভালো হয়ে যায়।
গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শহরের অনুভব করা যাবে না, গ্রামের সৌন্দর্য অনুভব করতে হলে গ্রামে আসা প্রয়োজন আমি এসে তা বুঝতে পারলাম। তাই তো শহরে যারা বসবাস করে, তারা হয়তো নাড়ীর টানেই গ্রামে ছুটে চলে নিজের গ্রামের বাড়িতে। একজন মানুষ যতই বড় হোক না কেন, সে তার শৈশব যে পল্লী জননীতে কাটিয়েছে সে সেই গ্রামের টানে ছুটে চলে নিজের আপন পথে। আর এজন্যই হয়তো সাহিত্যের কবিরা তাদের কবিতায় প্রকাশ করেছেন গ্রামের প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা -
আমরা যারা শহরে বসবাস করি তারা বুঝতেই পারি না গ্রামের রাতের আকাশ কতটা সুন্দর দেখা যায়। রাতের আকাশে তারা গুলো ঝিকিমিকি করে জ্বলে, মনে হয় যেন তারার মিলন মেলা বসেছে। যা আমরা শহরের এই বৈদ্যুতিক আলোর মাঝে কখনোই খুঁজে পায় না। আর জ্যোৎস্না রাত হলে তো কোন কথাই নেই। জোসনার আলোতে চারিদিকে ভরে ওঠে।
রাতের আকাশে পাবে তারা সোজা কর,
প্রকৃতির রূপ দেখে কাটাই প্রহর।
আমাদের গ্রামগুলো যেন প্রকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। গ্রামে রয়েছে ছোট ছোট কুড়ে ঘর আর এই ঘরগুলো ছাওয়া হয় সাধারণত খড় দিয়ে। অধিকাংশ ঘর গুলো দেখা যায় আধা পাকা যেগুলো টিনের ছাউনিতে ঘেরা বাড়ি দেখা যায় তবে ঘরবাড়ি যেমনই হোক না কেন এখানে রয়েছে মেঠো পথ, রয়েছে সবুজ ঘাস, গাছপালা, নীল আকাশ আর রয়েছে পাখির কিচির মিচির শব্দ যা শুনলে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। সবচেয়ে বেশি সুন্দর গ্রামের সকালবেলা।
আবার সন্ধ্যা বেলায় ঝিঝিরি শব্দে মন ভরে ওঠে। কোন কোন ঘরে জলে বৈদ্যুতিক লাইটের পরিবর্তে মাটির কুপি যা কেরোসিনের তেল দিয়ে জ্বলে সেটা আসলেই স্মৃতিময়। গ্রামে রয়েছে জীবনধারণের জন্য টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল আর রয়েছে পরিপূর্ণ শস্য ক্ষেত। তাইতো কবি বলেছেন-
অপরূপ এ গ্রামখানি ছবিতে আঁকা।
শিল্পীর মায়াময় এক সুষমা মাখা।
গ্রামের ক্ষেতগুলো ফসলে পরিপূর্ণ। সেখানে তৈরি হয় সকল ধরনের ফসল যা আমরা শহরের মানুষ কিনে খাই। আমাদের কৃষক ভাইয়েরা তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে ঘাম ঝরিয়ে তাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আমাদের জন্য এই খাদ্যগুলো তৈরি করেন। যখন গ্রামের ক্ষেতে ফসল গুলো তৈরি করা হয় তখন যেন সবুজের বেষ্টনীতে ভরে থাকে আবার কিছুদিনের ব্যবধানে এগুলো হয়ে ওঠে সোনালী রঙে। যখন সোনালী রঙ ধারণ করে তখন কৃষকেরা এগুলো ঘরে নিয়ে আসে এবং এগুলো থেকে তৈরি হয় আমাদের জন্য খাবার। হেমন্ত কালে সোনালী ধানে কৃষকের গোলা ভরে ওঠে। আর এজন্যই হয়তো কবি বলেছেন-
সোনালী ধানের ক্ষেত ফসলের বান।
শীতল বাতাসে পাবে সরিষার ঘ্রাণ।
গ্রামগুলোতে সারা বছরই যেন বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকে। সব সময় যেন আনন্দে পরিপূর্ণ। গ্রামে হেমন্ত কালে যখন পাকা ধান ঘরে ওঠে তখন কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন ধানের পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় যা আসলেই মনমুগ্ধকর এবং উপভোগ করার মত। এছাড়াও গ্রামে বিভিন্ন ধরনের মেলা বসে সেখানে গ্রামের মানুষের মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায় যাতে রয়েছে প্রকৃতির ছোঁয়া।
ধন্যবাদ সকলকে ।।
16 окт 2024