সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতী আল হোসাইনী (রঃ)--হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ) হযরত মুহম্মদ (দঃ)-এর পরবর্তী সময়ে তার প্রচারিত ইসলামকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন সূফী সাধকরা। তারা নিজেদের জীবনকে সংকটাপন্ন করে সুদূরে পাড়ি জমিয়েছেন এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন যথাযথভাবে। আল্লাহর ইচ্ছাই তাদের ইচ্ছায় পরিণত হয়েছে। তেমনি এক মহান সাধক হলেন হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ)। তিনি ধর্মাকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি তার সাধনার মাধ্যমে এই ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আল্লাহ ও রাসুলের ধর্মকে। হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ )-এর প্রতিষ্ঠিত তরিকাকে বলা হয় চিশতীয়া তরিকা। চিশতীয়া তরিকার আদি মুর্শিদ হলেন হযরত মুহম্মদ (দঃ)। রাসুল (দঃ)-এর আধ্যাত্মিক শিক্ষা হযরত আলী (কঃ) হয়ে হাসান-আল-বসরীর মাধ্যমে অধীনস্ত সিলসিলায় বয়ে এনেছে। চিশতীয়া তরিকার চিশতী উপাধি প্রথম শুরু হয় হযরত খাজা আবু ইসহাক শামী চিশতী থেকে। তিনি সিরিয়ার অধিবাসী ছিলেন।তিনি তাঁর মুর্শিদের আদেশে আফগানিস্তানের চিশতী নামক স্থানে বসতি স্থাপন করেন। এখান থেকেই তিনি তাসাউফ ও সিলসিলার প্রচার-প্রসার শুরু করেন। চিশতীয়া উপাধি এখান থেকেই শুরু হয়। খাজা বাবা এই তরিকায় সূত্রবদ্ধ হয়ে তরিকার দায়িত্ব পালনের ভার নেন। তাই তিনি এই তরিকার ইমাম ও কুতুব। তিনি ১১৮৫ খ্রিঃ/৫৮১ হিঃ সালে ভারতবর্ষে আগমন করে ইসলামের তওহিদ, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রচার করেন। চিশতিয়া তরিকার ইমাম ও কুতুব হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ) ১১৪২ খ্রিঃ /৫৩৬ হিঃ সালে ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলার সানজারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ গিয়াস উদ্দীন সঞ্জরি (রহঃ) এবং মাতার নাম সৈয়্যেদা উম্মেওয়ারা বিবি (রহঃ)। তিনি পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয়দিক থেকেই ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের বংশধর। খাজাবাবা খাজা উসমান হারুনীর খেদমতে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘসময় তিনি তার মুর্শিদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন।মুর্শিদের সান্নিধ্যে তিনি অনেক স্থান ভ্রমণ করেন এবং অনেক গুণী সাধক কামেলদের সান্নিধ্য লাভ করে মারেফতের তত্ত্ব সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞানলাভ করেন। খাজা বাবা (রহঃ) তাঁর মুর্শিদ কেবলার সঙ্গে হজব্রত পালন শেষে মদিনায় গমন করেন। মদিনায় স্বীয় মুর্শিদ হযরত খাজা ওসমান হারুনী তাঁকে রাসুলের হাতে সঁপে দেন। নবীজী খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ)-কে হিন্দুস্থানে গিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য নির্দেশ দেন। খাজা উসমান হারুনী (রহঃ) তাঁর প্রিয় শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশে মক্কায় ফিরে আসেন। মক্কায় তরিকতপন্থীদের ইমাম, হাকিকত বিশারদ, আউলিয়াকুল করা হয়।পরে ওহাবি আন্দোলনে তাঁর মাজারসহ সকল মাজার নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। মুর্শিদের ওফাতের পর খাজাবাবা দারুণ ব্যথিত হৃদয় নিয়ে হিন্দুস্থানের পথে রওনা হন। খাজাবাবা হিন্দুস্থান আসার পথে লাহোরে হুজুর বেরীর (রহঃ) (দাতা গঞ্জে বখশ) মাজারে ধ্যান ও এতেকাফ ইবাদত করে কিছুকাল অবস্থান করেন। খাজাবাবা (রহঃ) হুজুর বেরীর (রহঃ) দরজায় দুছত্র ফারসি কবিতা লিখেছিলেনÑ যা আজো শ্রদ্ধার সঙ্গে সকলে পড়ে থাকেন। কবিতাটি হলো ‘গঞ্জে বখশ জগতের প্রেরণা ও খোদার নূরে। (তিনি অসামর্থ্যদের পীরে কামেল আর কামেলদের পথপ্রর্দশক।’) লাহোর ত্যাগ করে তিনি দিল্লি ও পরে রাজপুত শক্তির কেন্দ্রবিন্দু আজমিরে আস্তানা করেন। খাজা বাবার অপার মহিমায়, মানব প্রেম ও চারিত্রিক মাধুর্যে মোহিত হয়ে হিন্দু প্রভাবশালীদের প্রবল বাধা বিপত্তির মধ্যেও দলে দলে লোক ইসলাম গ্রহণ করে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে থাকে। এতে হিন্দু রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে খাজাবাবাকে আজমির ত্যাগের নির্দেশ দেন। খাজাবাবা ঐ সময় বলেছিলেনÑ ‘আমি পৃথি¦রাজকে জীবিত বন্দী করে শিহাবুদ্দীন ঘোরীর হাতে তুলে দিলাম।’ তাঁর এই ভবিষদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল।
28 мар 2019