২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাইশমৌজা বাজার | নবীনগর,ব্রাহ্মণবাড়িয়া | baishmoja bazar nabinagar brahmanbaria
#baishmojabazar
#বাইশমৌজা_গরুর_হাট
#বাইশমৌজা
#বাইশমৌজাবাজার
@brahmanbariavloggerhappy
নাম তার বাইশমৌজা বাজার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরের বীরগাঁও ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরের ঐতিহ্যবাহী এই বাজারটির বয়স প্রায় ২০০ বছর। প্রথমে এই বাজারটির নাম ছিল আছি মাহমুদের বাজার। বাজারটি নিয়ে মেঘনা নদীর অপর পাড়ের আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরের সাথে নবীনগরের বিবাদ লেগেই থাকত। পরবর্তীতে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে নবীনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর তীরে এই বাজারের নামকরণ করা হয় ‘বাইশমৌজা বাজার’। উপজেলার বীরগাঁও ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের সম্মিলন করে এর নামককরণ করা হয় বাইশমৌজা বাজার। সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বসে এটি। এই সাপ্তাহিক হাটে আসে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা। এছাড়া সাধারণ ক্রেতা তো আছেই। বাজারটিতে যাতায়াতের একমাত্র বাহন হলো নৌকা। যেদিক দিয়ে যাওয়া হোক না কেন নৌকা ছাড়া উপায় নেই। মানুষ, পশু ও মালামাল একই নৌকায় আনা নেওয়া করছেন মাঝিরা। দূরদূরান্ত থেকে বড় নৌকা ও ট্রলারে পাইকাররা গরু, মহিষ, ভেড়াসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। বাজারে ঢোকার সময় চোখে পড়ে নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো বড়-ছোট নৌকা। ক্রেতাদেরও পশু ও মালামাল নিয়ে ফিরে যেতে হয় নৌকা দিয়ে নদী পথে। বাজারটি মঙ্গলবার জমজমাট বেশি থাকে মূলত গরুর বাজারকে কেন্দ্র করে। এইদিন থাকে ক্রেতা বিক্রেতাদের বিপুল সমাগম। দূর দূরান্ত থেকে আসেন পাইকাররা। বাজারটি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা। যেমন-গরু বাজার, মহিষ-ছাগলের বাজার, কাঠের বাজার, পাখির বাজার, মসলার বাজার, শুটকির বাজার, মাছ ধরার জালের বাজার, হাঁস-মুরগীর বাজার, পাটের বাজার, সবজির বাজার, বাদামের বাজার। বাজারটির বেশির ভাগ অংশ জুড়ে আছে গরু, মহিষ ও ছাগলের হাট বা বাজার। ক্রেতাদের ধারণা জেলার অন্যসকল হাট থেকে এখানে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া অনেকটা কম দামে পাওয়া যায়। হাসিলও দিতে হয় নামমাত্র টাকায়। বাইশমৌজা বাজারে গরু ও মহিষের হাট বসে পৃথকভাবে। গরুর হাটের দেখা যায় বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসা বড় বড় গরু বিক্রয়ের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো আছে। একেকটার দাম ৮০ হাজার থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা। ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুও আছে অনেক। মাঝারী সাইজের গরু ৬০-৪০ হাজার ও ছোট সাইজের গরু ৩৫-থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। গরু ক্রয় করতে আসা জেলা শহরের আরিফ হোসেন বলেন, বাড়ির বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কুরবানির ঈদে এই বাজার থেকে গরু কিনি। অন্যান্য বাজার থেকে এই বাজারে গরুর মূল্য অনেকটা সাশ্রয়ী ও হাসিল অনেক কম। এই বাজারের বিক্রয়ের জন্য প্রচুর পরিমাণে মহিষও উঠে। এগুলোর দাম ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মহিষের বাজারের পাশেই বসে ছাগল ও ভেড়ার হাট। তুলনামূলক দাম ও হাসিল কম থাকায় পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা বেশি। আরেকটি জিনিসের বাজারটি জন্য বিখ্যাত। তা হচ্ছে শুকনো মরিচ। সাপ্তাহিক হাটের দিনে প্রচুর পরিমাণে লাল শুকনো মরিচ নিয়ে বিক্রেতারা আসেন। শুকনো মরিচ কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসেন। আসেন বিভিন্ন প্যাকেট জাত মসলা কোম্পানির প্রতিনিধিরা। মরিচ বিক্রেতা মো. সরোয়ার্দী বলেন, বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি এই বাজারে মরিচের ব্যবসা করছি। পাশাপাশি আমার ছেলেকেও আলাদা মরিচের ব্যবসায়ী দিয়ে দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে ব্যবসা ভালই চলছে। এখন ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে দিব। এমন প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়া কঠিন। কারণ এমন কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ নেই এখানে পাওয়া যায় না। বেতের তৈরি ঝুড়ি, কুলা, ডুলা, হাতপাখা ও সব প্রকার মসলা, সবজি, পাখি, হাঁস-মুরগী, কবুতর, শুঁটকি, মাছ ধরার জাল, কাঠ, পাট, বাদামসহ আরো হরেক রকম মালামাল। বাজারের মধ্যবর্তী জায়গায় বসে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ নানান প্রকার মসলার বাজার। স্থানীয় কৃষক ও পাইকাররা মসলা সাজিয়ে বসেন বিক্রি করতে। দামও তুলনামূলক কম মসলার। তাই আশপাশের মানুষ সপ্তাহিক বাজারে মসলা ক্রয় করে নিয়ে যায় এই বাজার থেকে। এর পাশেই বসে শাক-সবজির বাজার। স্থানীয় কৃষকদের সবজি সহ পাইকারদের আনা সবজি বিক্রি করা হয় এখানে। এখানে শুঁটকি নিয়ে আসেন মেঘনা নদীর অপর প্রান্তের আশুগঞ্জের লালপুরের ব্যবসায়ীরা। মেঘনা নদীর শুঁটকির কদর অনেক বেশি এই অঞ্চলে। বাশঁমতি, লইট্টা, পুটি, ম্যানি, কাইক্কাসহ নানান জাতের দেশীয় শুঁটকি বিক্রি জন্য নিয়ে আসা হয় এই বাজারে। পাখি, বেতের তৈরি মালামাল, মাছ ধরার জাল, পাট ও হাঁস-মুরগির বাজার বসে একটি অংশে। এর পাশের একট অংশে বিক্রি করা হয় বাদাম, সুতা, চাল ও ধান। বাজারে এককোণে অংশ জুড়ে আছে কাঠের বাজার। মাঠের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন গাছের কাঠ। বাড়িঘর, আসবাবপত্র ও নৌকা তৈরি করতে ক্রেতা কাঠ কিনে নিচ্ছেন।
10 окт 2024