কুরআন
আল 'আনকাবুত
২৯
নাযিল হবার সময়-কাল
৫৬ থেকে ৬০ আয়াতের মধ্যে যে বক্তব্য এসেছে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, সূরাটি হাবশায় হিজরতের কিছুকাল আগে নাযিল হয়েছিলো। অধিকন্তু বিষয়বস্তুসমূহের আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যও একথাই সমর্থন করে। কারণ, পশ্চাতপটে সে যুগের অবস্থার চিত্র ঝলকে উঠতে দেখা যায়। যেহেতু এর মধ্যে মুনাফিকদের আলোচনা এসেছে এবং মুনাফিকীর প্রকাশ ঘটে মদীনায়, সেহেতু কোনো কোনো মুফাসসির ধারণা করে নিয়েছেন যে, সূরাটির প্রথম দশটি আয়াত হচ্ছে মাদানী এবং বাকি পূর্ণ সূরাটি মক্কী। অথচ এখানে যেসব লোকের মুনাফিকীর কথা বলা হয়েছে তারা কেবল কাফেরদের জুলুম, নির্যাতন ও কঠোর শারীরিক নিপীড়নের ভয়ে মুনাফিকী অবলম্বন করছিলো। আর একথা সুস্পষ্ট যে, এ ধরনের মুনাফিকীর ঘটনা মক্কায় ঘটতে পারে, মদীনায় নয়। এভাবে এ সূরায় মুসলমানদেরকে হিজরাত করার উপদেশ দেয়া হয়েছে, এ বিষয়টি লক্ষ্য করে কোনো কোনো মুফাসসির একে মক্কায় নাযিলকৃত শেষ সূরা গণ্য করেছেন। অথচ মদীনায় হিজরতের আগে মুসলমানগণ হাবশায়ও হিজরত করেছিলেন। এসব ধারণা আসলে কোনো হাদীসের ভিত্তিতে নয়। বরং শুধুমাত্র বিষয়বস্তুর আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। আর সমগ্র সূরার বিষয়বস্তুর ওপর সামগ্রিকভাবে দৃষ্টিপাত করলে এ আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য। মক্কার শেষ যুগের নয় বরং এমন এক যুগের অবস্থার প্রতি অংগুলি নির্দেশ করে যে যুগে মুসলমানদের। হাবশায় হিজরতের ঘটনা ঘটেছিল।
বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় বক্তব্য
সূরাটি পড়লে মনে হবে এটি যখন নাযিল হচ্ছিল তখন মক্কায় মুসলমানরা মহাবিপদ-মুসিবতের মধ্যে কালাতিপাত করছিলো। কাফেরদের পক্ষ থেকে পূর্ণ শক্তিতে চলছিল ইসলামের বিরোধিতা এবং মু'মিনদের ওপর চালানো হচ্ছিলো কঠোর জুলুম-নিপীড়ন। এহেন অবস্থায় মহান আল্লাহ একদিকে সাচ্চা ঈমানদারদের মধ্যে সংকল্পের দৃঢ়তা, সাহস ও অবিচলতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এবং অন্যদিকে দুর্বল ঈমানদারদেরকে লজ্জা দেবার জন্য সূরাটি নাযিল করেন। একই সাথে এর মধ্যে মক্কার কাফেরদেরকেও কঠোর হুমকি প্রদর্শন করা হয়েছে যে, তোমরা নিজেদের জন্য এমন পরিণতি ডেকে এনো না সত্যের সাথে শত্রুতা পোষণকারীরা প্রতি যুগে যার সম্মুখীন হয়ে এসেছে।
সে সময় কিছু সংখ্যক যুবক যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন প্রসংগক্রমে তারও জবাব দেয়া হয়েছে। যেমন তাঁদের পিতা-মাতারা তাঁদের ওপর মুহাম্মদ সা.-এর দীন ত্যাগ করে তাদের দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। তাঁদের পিতা-মাতারা বলতো, যে কুরআনের প্রতি তোমরা ঈমান এনেছো তাতেও তো একথাই লেখা আছে যে, মাতা-পিতার অধিকার সবচেয়ে বেশী। কাজেই আমরা যাকিছু বলছি তাই তোমরা মেনে নাও। অন্যথায় তোমরা নিজেদের ঈমান বিরোধী কাজে লিপ্ত হবে। ৮ আয়াতে এর জবাব দেয়া হয়েছে।
অনুরূপভাবে কোনো কোনো নওমুসলিমকে তাদের গোত্রের লোকেরা বলতো, তোমরা আমাদের কথা • মেনে নাও এবং ঐ ব্যক্তি থেকে আলাদা হয়ে যাও, এজন্য আযাব-সওয়াব যাই হোক, তার দায়িত্ব
17 сен 2024