বেচারা #AymanSadiq ২ দিক থেকেই ফেসে গেল। ছেলেটা মেধাবী, টেন মিনিট স্কুল বানাইছে। যতই সমালোচনা করেন, তার যোগ্যতা আছে বলেই এতদূর আসছে, সেটা প্রতিটা ভিডিওতে স্পষ্ট। এবং সে খুব উগ্র বা অহংকারী এমনও না, বরং বিনয়ী।
ইস্যু পেয়েই অনেকে তার পিছে লেগে গেছে! কিন্ত আসলেই কি টেন মিনিট স্কুলের ভিডিও গুলা এতই খারাপ? একটা “ভুল” এর কারণে এত সরলীকরণ করে আইমানের বিচার করা লাগবেই? তারে আপনার মতের মত করে ভাবতেই হবে? বা বেশিরভাগ মানুষ যেমন ভাবে, আইমানকেও সেভাবে ভাবতে হবে?
আইমান কি #সমকামিতা সাপোর্ট করে পোস্ট দিছে? নাকি ভিডিও ডিলেট করে দিছে? এই ভিডিও ডিলিট করার কারণেও কত সমালোচনা! কত পক্ষ, কত মানুষ, কত রকম মত।
আসলে, আমরা জাতি হিসেবে খুবই প্রতিক্রিয়াশীল। আপনি, আমি, কম বেশি সবাই। অন্যের মতামত নিতে পারি না, এমনকি শ্রদ্ধা রেখে দ্বিমতও করি না। নিজের সাথে না মিললে প্রচন্ড ভাষায় আক্রমণ করি।
ব্যক্তিগত ভাবে, আমি সমকামিতাকে চরম ভাবে ঘৃণা করি। আমি নিজে মাদ্রাসা জীবনে অনেক কিছুর সাক্ষী। আর মুসলিম হলে তো সমকামিতা সাপোর্ট করা সম্ভব না। কিন্ত এখানে আরো অনেক আলাপ আছে। কেউ দ্বিমত করলে আপনি তারে মারবেন না খুন করবেন? সত্য বা আদর্শ প্রচারের পদ্ধতি কি ভয়ংকর উগ্র হবে?? আপনি ভদ্রতার সাথে বিরোধী মত সহ্য করতে পারেন তো?? আইমানের কি করা উচিত? কি করলে সবাই খুশি হবে?? তারে সবাইকে বা বেশিরভাগের মন জুগায়াই চলতে হবে, নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও!
উত্তর আছে?
সবারই আছে। কিন্ত আপনারটাই একমাত্র সঠিক - এমন বলার মত অবিনশ্বর উত্তর নাই।
ধর্মীয় উগ্রতার চেয়ে বড় ভাইরাস আর কোনটাই নাই। এই উগ্র গুলা চরমভাবে দ্বিমুখী, চরম হিংস্র, চরম স্বার্থপর, সারাবিশ্বের জন্যেই হুমকি। মতের সাথে না মিললে তারা আপনাকে ইসলামের নামে, আল্লাহর নাম নিয়ে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিবে। তারপর খুন করে ফেলতেও দ্বিধা করবে না। মুসলিমদের বর্তমান অধঃপতনের মূল কারণ হচ্ছে এই শ্রেণী, যারা মনে করে জান্নাতের চাবি একমাত্র তাদের কাছেই আছে।
এদের দেখলে কেউই বলবে না, #ইসলাম শান্তির ধর্ম। বরং বলবে, এটা হল দানব বা দৈত্যের ধর্ম। এদের দেখলে আমারই ভয় লাগে.. কোন মত দিলে কখন আমাকেও ইহুদীদের দালাল বলে কতল করার ফতোয়া দিয়ে দেয়। এটা ট্রু ফিলিংস, সত্যি কথা, সরল স্বীকারোক্তি। এদের আমার ভয় লাগে। হয়তো আমি খুব পাপী বান্দা আর খারাপ বলেই।
কিন্ত আমার স্রষ্টার সাথে তো আমার আলাদা একটা সম্পর্ক আছে। কত যত্ন করে, ভালবাসা দিয়ে আল্লাহ আমায় সৃষ্টি করেছেন। সেই স্রষ্টার সাথে আমার কত কথা হয়, কত অভিমান হয়, কত চাওয়া-পাওয়া হয়। কেন এরা আমাকে জোর করে স্রষ্টার থেকে দূরে সরাতে চায়, কেন আমাকে বিচার করতে চায়! আমাকে বিচার করার যোগ্যতা আর অধিকার তো একমাত্র আমার রবের, কোন মানুষের নয়। মানুষ তো আমার গোপন পাপ আর শুদ্ধ ভালবাসা টুকু জানে না, জানে তো আমার স্রষ্টা। তবুও কেন মানুষ অন্তর্যামী ভান করে, স্রষ্টার অধিকার কেড়ে নিয়ে আমার জান্নাত-জাহান্নামের ফয়সালা দুনিয়াতেই করে দেয়! এটাই শিরক। আল্লাহর সাথে এরচেয়ে বড় অন্যায় আর কি হতে পারে??
ইসলাম প্রচার করা বা আদর্শ প্রচার করার পদ্ধতি এতটা ভয়ংকর উগ্র হতে পারে, আমি কল্পনাও করতে পারি না। এরা শুধু মানুষের পিছে লেগে থাকে। ওয়াজ মাহফিলের ৯০% করে সমালোচনা। কাউরে না পাইলে একে অপরের পিছে লাগে, এক হুজুর আরেক হুজুরের পিছে। না জেনে বা অল্প জেনেই নিজেকে মহাজ্ঞানী ভেবে সহজ সরল মানুষকে যাচ্ছেতাই বুঝায়। নাস্তিক ইহুদীদের সমালোচনায় দিন যায়, কিন্ত তাদের চেয়ে উত্তম পদ্ধতিতে আদর্শ প্রচারের রাস্তা বের করা বা দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা এদের নাই। মোবাইল, ফেসবুক সহ জ্ঞান বিজ্ঞানের সব ফল ভোগ করেও সারাদিন বিজ্ঞানকে গালি দেয়া ছাড়া, সেই বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে নিজেদের উন্নত করার কোন ইচ্ছা তাদের নাই। এভাবে কি দ্বীন কোনদিন বিজয়ী হবে, কোনদিন কালেমার পতাকা উড়বে??
আমার খুব ভাল বা খারাপ একটা গুণ হল, আমি বেশিরভাগ মানুষ কি ভাবে বা কি পছন্দ করে, সেটা ভেবে কিছু লিখি না বা বলি না। নিজের বিবেক বিসর্জন দিয়ে পপুলারিজমের চর্চা করি না। সেজন্যে আগেও অনেক গালি খাইছি, সামনেও খাবো। তবুও কেউ আমাকে জোর করে তাদের মত করে ভাবতে বা বলতে বাধ্য করাতে পারবে না।
আমারে যারা অন্ধভাবে পছন্দ করেন, আমি সব সময় তাদের বলি, ডু নট ফলো মি। আমি পারফেক্ট না। আমার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমি আমার নীতির বাইরে কখনো যাই না৷ আমাকে ভাল না লাগলে, আমাকে গালি দেয়ার জন্যে জোর করে আমাকে ফলো করার প্রয়োজন নাই। এত আজাইরা কামের জন্যে জীবন নয়, খুবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই নশ্বর জীবন!
আর অতি জ্ঞানী, অতি ইসলামিক নামের মূর্খদের আমি খুব ঘৃণা করি। যারা আল্লাহর নাম নিয়ে সহীহ গালি দেয়, স্রোতের সাথে তাল মিলায়, বারবার ডিগবাজি খায়। এদের নিজস্ব চিন্তা করার ক্ষমতা নাই, না বুঝেই ঘন্টার পর ঘন্টা তর্ক করে যায়। এই জাহিলদের আল্লাহর শিখানো ভাষায় সালামঃ কলু সালামা।
শেষ কথা হল, এসব ভ্রান্ত পদ্ধতিতে কোনদিন ইসলাম বিজয়ী হবে না। এভাবে ইসলাম গায়ের জোরে, ভয়ের ধর্ম হিসেবে কিছু স্থানে হয়তো প্রভাব ফেলবে, কিন্ত মানুষের মন জয় করতে পারবে না। সেজন্যেই এখন ইসলাম আছে ফেসবুকের ওয়াজে, বাস্তব জীবনে ইসলাম নাই। আল্লাহর নাম নিয়ে সারাদিন ফেসবুকে তর্ক করা লোকটা ১ ওয়াক্ত নামাজও পড়ে না, সুদ খায়, চুরি করে, ধর্ষণ করে। আই চ্যালেঞ্জ।
কেউ সমকামিতা সাপোর্ট করলে তারে খুন করে ইসলাম কায়েম হবে না কোনদিন। ইসলাম কায়েম হবে তখন, যখন ইসলামিস্টরা আইমানরে গালি না দিয়ে আরো ৭০ টা “টেন মিনিট মাদ্রাসা” তৈরী করে ততোধিক কোয়ালিটি কন্টেন্ট বানিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে বুঝাতে পারবে, হাও & হোয়াই ইসলাম ইজ বেটার & পিসফুল, কমপ্লিট কোড অফ লাইফ।
~ Muntasir Mahmud
- ৫ জুলাই, ২০২০, রাজশাহী।
যোগাযোগঃ / muntasir.birds
Twitter: moontasir190
Instagram: moontasir190
20 сен 2024