কুয়াকাটায় সূর্যোদয়’ কথাটি নতুন নয়। তবে সূর্যোদয়ের পূর্ণাঙ্গ দৃশ্য দেখতে হলে যেতে হবে মূল সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে, গঙ্গামতির চর পেরিয়ে কাউয়ার চর। সেখান থেকেই দেখা মিলবে সূর্যোদয়।
কুয়াকাটা থেকে ভাড়া করা মোটরসাইকেলে বা যানবাহনে সৈকত ধরে এগোতে থাকলে মিলবে গঙ্গামতির চর, এরপর কাউয়ার চর। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা মোটরসাইকেলে চেপে যেতে হবে সে জায়গায়।
গঙ্গামতির চরে সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য ভোর থেকে দর্শনার্থীরা অপেক্ষা থাকায় সেখানে বসেছে বেশ কয়েকটি খাবার দোকান, ডাব-পানীয়ের স্টল। সূর্যোদয় দেখতে এই স্থানেই ভিড় বেশি থাকে দর্শনার্থীদের।
তবে যারা বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে পূর্ণাঙ্গ সূর্যোদয় দেখতে চান, তাদের যেতে হবে আরও প্রায় তিন কিলোমিটার। গঙ্গামতি খাল পেরিয়ে কাউয়ার চর। খালে নৌকার ওপর মোটরসাইকেল দিয়ে করতে হবে পারাপার।
নির্ধারিত সময়ে সূর্যোদয় হওয়ার আগে থেকেই দুই পয়েন্টে ভিড় করছিলেন দর্শনার্থীরা।
মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহার : কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব দিকে মিশ্রিপাড়ায় রাখাইন পল্লী অবস্থিত। জানা যায় প্রভাবশালী মিশ্রি তালুকদারের নামে এ পল্লীটির নামকরণ করা হয়। এখানকার বৌদ্ধমন্দির যা সীমা বৌদ্ধ বিহার নামে পরিচিত। এখানে দুশো বছরের পুরাতন বৌদ্ধমূর্তি ও ভারত উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
লেবুর বন, কুয়াকাটা: নাম লেবুর বন হলেও আদতে এখানে কোনো লেবু গাছ নাই। নাম কেন লেবুর বন হলো তার ও ইতিহাস জানা যায়নি।
কুয়াকাটা প্রধান বিচের পশ্চিম অংশে এই লেবুর বন স্থানের অবস্থান। যা কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে।
এই জায়গা থেকে সূর্যাস্ত সব চেয়ে ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। যার পূর্বে দিকে ম্যানগ্রোভ বন এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর এবং এখান থেকেই ফাতরার বন (সুন্দরবনের একাংশ) দেখা যায়।
এখানে যেতে হলে কুয়াকাটা চৌরাস্তা থেকে অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে যেতে হবে।
লেবুর বনের এক পাশে অনেক গুলো মাছ ফ্রাই করার দোকান আছে। চাইলে এখান থেকে তাজা মাছ ফ্রাই উপভোগ করতে পারেন।
লেবুর বনের একটু সামনে বিরাট ঝাউবন। একটু সময় নিয়ে এটাও উপভোগ করতে পারেন।
নোটঃ লেবুর চর কুয়াকাটা থেকে পূর্ব দিকে আর এটি লেবুর বন যা কুয়াকাটা থেকে পশ্চিম দিকে।
আজও রহস্যে ঘেরা দুইশ বছর আগের ‘সোনার নৌকা’
১৯৮০-৯০ সাল পর্যন্ত নৌকাটি দেখা যেত কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় এক হাজার মিটার দূরে বনের ভেতরে একটি বড় কূপের মধ্যে। সোনার নৌকা দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে কখনো হেঁটে কখনো ইটের রাস্তায় ভ্যানে করে লোকজন ছুটে আসতো।
কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বিশালাকৃতির নৌকাটি দেখে মানুষ অবাক হতো আর ভুলে হেটে আসার কষ্টটুকু। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় ‘ম্যারিয়েন’র কারণে জলোচ্ছ্বাস হলে বালুতে ঢেকে যায় নৌকাটি। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে এলোমেলা হয়ে যায় কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত।
বিভিন্ন গবেষণার পর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ উদ্যোগ নেয় আদি নিদর্শন হিসেবে এটিকে উদ্ধার করার। ২০১২ সালে নৌকা বিশেষজ্ঞ ইভস মেরিকে প্রধান করে ২৩ ডিসেম্বর নৌকাটি মাটির নিচ থেকে আনুষ্ঠানিক উত্তোলনের কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।
সেই থেকে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রযুক্তি আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নৌকাটি উদ্ধার করে সংরক্ষণ করা হয় কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের পাশে। পরবর্তী গবেষণায় বেরিয়ে আসে অনেক তথ্য।
৭২ ফুট দৈর্ঘ্য আর ২৪ ফুট প্রস্থের নৌকাটি তৈরি করা হয় অন্তত ২০০ বছর আগে। স’মিল বা আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় তখনকার সময় ছেনি বা কুঠার দিয়ে তেমন কোনো ফিনিশিং ছাড়াই তৈরি করা হয় এই নৌকাটি।
3 авг 2023