সরকারি কর্মীদের আরএসএসের কর্মসূচীতে যোগ দেওয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা সম্প্রতি মোদি সরকার তুলে নিয়েছে। যার প্রতিবাদে সরব হয়েছে কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি।
ছ'দশকের শাপমুক্তি! 58 বছর আগে বিজেপি ও আরএসএসের উপর জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল মোদি সরকার। স্বভাবতই কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি এবং আরএসএস ৷ যদিও, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ৷ তাদের অভিযোগ, এর মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ৷এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) বলেছে, "এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে ৷" তবে, এই ইস্যুতে আগের সব সরকারের সমালোচনা করেছে আরএসএস ৷ বিশেষত, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে নিশানা করা হয়েছে ৷ বলা হয়েছে, পূর্বতন সরকার (পড়ুন ইউপিএ সরকার) হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিকে টার্গেট করে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে ৷
যথাযথ নথি না-পেলে ভাঙা হতে পারে আরএসএস দফতর, হুঁশিয়ারি আসানসোলের মেয়রের
এই নিষেধাজ্ঞার জারি হয়েছিল 1966 সালে ৷ সে সময় কংগ্রেস ভারতের ক্ষমতায় ছিল ৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা পীযূষ গোয়েল বলেছেন, "কংগ্রেস সরকারের পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল ৷ এই দলটি সর্বদা তোষণের রাজনীতির স্বার্থে জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির প্রতি নেতিবাচক মানসিকতা দেখিয়েছে ।"অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদির সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, "আমরা জানি, বিজেপি কীভাবে আরএসএস-কে ব্যবহার করে সমস্ত সাংবিধানিক ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দখল করে নিচ্ছে ৷ সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে মোদিজি সকল সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক ধ্যানধারণাকে একটি নির্দিষ্ট দিকে চালিত করার চেষ্টা করছেন ৷"
অশান্ত মণিপুরে এবার নজর দেওয়া প্রয়োজন, নাগপুর থেকে মোদিকে বার্তা ভাগবতের
তিনি অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ সরকারি কর্মচারীদের তাঁদের কাজের জায়গায় নিরপেক্ষ ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে বাধা সৃষ্টি করবে ৷ সেই তাঁর অভিযোগ, সদ্য় সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দেশের মানুষ বিজেপি ও আরএসএসের সংবিধান বদলের অসাধু বাসনাকে বানচাল করে দিয়েছে। সেই কারণে এই বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের রাস্তায় হেঁটেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জুলাই মাসের ৯ তারিখ ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং-এর ইস্যু করা নির্দেশের কপি নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করেছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি কর্মীদের আরএসএসের কর্মসূচীতে যোগ দেওয়ার ওপর ১৯৬৬ সালে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল তা তুলে নেওয়া হয়েছে। ১৯৪৮ সালে নাথুরাম গডসে গান্ধীজিকে হত্যা করার পরে আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
জয়রাম রমেশ তাঁর পোস্টে সেই বিষয়টি উল্লেখ করে লিখেছেন, গান্ধীজিকে হত্যা করার পরে ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্দার প্যাটেল আরএসএসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। পরে ভালো ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। তারপরও আরএসএস কোনওদিন নাগপুরে তিরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেনি। ১৯৬৬ সালে নতুন করে ফের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় আরএসএসের ওপর। সেইসময় পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোনও সরকারি কর্মচারী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও জামাত-ই-ইসলামির কর্মসূচীর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে না। তারপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞাই জারি ছিল। অটলবিহারী বাজপেয়ীর শাসনকালেও সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চেষ্টা হয়নি। কিন্তু, ২০২৪ সালের ৪ জুনের পর স্ব-অভিষিক্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আরএসএসের মত পার্থক্য দেখা দেওয়ার পরে ২০২৪ সালের ৯ জুলাই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হল। এর ফলে এবার আমলাতন্ত্রেও আরএসএস মাতব্বরি চালাবে।
এই বিষয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তোপ দেগেছেন হায়দরাবাদের সাংসদ ও মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসিও। তাঁর কথায়, যদি এই নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়টি সত্যি হয় তাহলে তা ভারতের অখণ্ডতা ও ঐক্যের বিরোধী।
/5 এরই সঙ্গে অমিত মালব্য লেখেন,'নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল কারণ, ৭ নভেম্বর, ১৯৬৬ সালে, সংসদে গো-হত্যা বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। আরএসএস-জনসংঘ লক্ষ লক্ষ সমর্থন জোগাড় করেছিল। পুলিশের গুলিতে অনেকের মৃত্যু হয়। ১৯৬৬ সালের ৩০ নভেম্বর, আরএসএস জনসংঘের দাপটে কাঁপতে থাকা ইন্দিরা গান্ধী সরকারি কর্মীদের আরএসএস-এ যোগদান নিষিদ্ধ করেছিলেন।' এদিকে, এই নিষধাজ্ঞা তোলা নিয়ে কংগ্রেস ব্যাপক ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
/5 জয়রাম রমেশ তাঁর টুইটে লেখেন, ‘গান্ধীজির হত্যার পর সর্দার প্যাটেল ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরএসএসকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তীতে ভালো আচরণের আশ্বাসে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এর পরেও কখনও নাগপুরে আরএসএস তেরঙা ওড়ায়নি।' তিনি লেখেন,' ১৯৬৬ সালে, একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল সরকারী কর্মচারীদের আরএসএস কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার উপর, সঠিকভাবে।
১৯২৫ সালে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার প্রতিষ্ঠিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস অতীতে তিন বার নিষেধাজ্ঞার কবলেও পড়েছে। প্রথম বার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধীহত্যার পরে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই পটেল আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অনেক নেতাকে কারারুদ্ধ করেছিলেন সে সময়। ১৯৪৯-এর জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছিলেন বল্লভভাই। #bangla_khobor #tripurapublicopinion_news #bjptripura #bjpvscongress
16 окт 2024