রবীন্দ্র জীবনে মৃত্যু - শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ( ১৯০৭ )
মৃণালিনী দেবী বিদায় নিয়েছিলেন বাংলা ১৩০৯ সালের ৭ই অগ্রহায়ণ। ঠিক তার পাঁচ বছর পরে, ১৩১৪ সালের ওই একই তারিখে - আবার বজ্রপাত রবীন্দ্রনাথের জীবনে । অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমার কাছাকাছি সময়েই অমাবস্যার নিকষ কালো অন্ধকার ।
১৮৯৬র ১২ই ডিসেম্বর জন্মেছিলেন রবীন্দ্রনাথের পঞ্চম এবং শেষ সন্তান - শমীন্দ্রনাথ। ছেলেটি রূপে, গুণে, অনেকটাই তার বাবার মত ছিল। ভাল কবিতা পড়তে পারত, অভিনয় করতে পারত, ভাল পাঠক ছিল, আর তার সবকিছুতেই ছিল যেন একটা বিরল প্রতিভার ছোঁয়া। শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শুরু থেকেই শমীন্দ্রনাথ ছিলেন সেখানকার ছাত্র। শমী ভীষণ প্রিয় ছিল রবীন্দ্রনাথের, হয়ত কোথাও তার মধ্যে নিজেরই ছায়া তিনি দেখতে পেতেন। ১৯০২এ স্ত্রী মৃণালিনী আর তার কয়েকমাস পরেই কন্যা রেণুকার মৃত্যুর পর মা আর দিদিহারা এই ছোট পুত্রকে রবীন্দ্রনাথ যেন আরো বেশী করে কাছে টেনে নিয়েছিলেন। সাধারনভাবে তিনি কখনো তাঁর নিজের সন্তানদের সঙ্গে এক শয্যায় শুতেন না। তিনি একলা শুতে ভালবাসতেন, সন্তানরা আলাদা শুত। শমীর কিন্তু খুব ইচ্ছে করত বাবার সঙ্গে শোবার । সে কথা জানতে পেরে রবীন্দ্রনাথ ঠিক পাশের লাগোয়া খাটে তার শোয়ার ব্যবস্থা করলেন। রাতে ঘুমের ঘরে মাতৃহারা বালক তার হাত বাড়িয়ে দিলে সচেতন রবীন্দ্রনাথও বাড়িয়ে দিতেন তার হাত। বাবার স্নেহ মাখানো হাতকেই মায়ের হাত মনে করে শমী আবার ঘুমিয়ে পড়ত । এমন নিবিড় ছিল সেই পিতা পুত্রের সম্পর্ক । বিশ্ববিখ্যাত বাবার মধ্যেই শমী খুজে পেতে চাইত একই সঙ্গে বাবা আর মাকে। পিতার সেই স্নেহচ্ছায়ায় সেও নিজেকে যেন নিজের অজান্তেই গড়ে তুলছিল তার বাবার যোগ্য করে। আর তারই একটা নিদর্শন যেন ছড়িয়ে আছে আজকের বসন্তোৎসবে। যে বসন্তোৎসব আজ এত প্রিয় অনুষ্ঠান - তার সূচনা কিন্তু হয়েছিল এই শমীর হাতেই - মৃত্যুর কয়েকমাস আগেই। ১৯০৭ সালে বসন্ত কালে শ্রী পঞ্চমীর দিনে, শমী অন্য অনেককে নিয়ে শান্তিনিকেতনে করে ঋতু উৎসব, যেটিই পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে বসন্তোৎসবে পরিণত হয়। সেই ঋতু উৎসবে শমী নিজে সেজেছিল বসন্ত, অন্যরা কেউ সেজেছিল বর্ষা, কেউ শরত। আর এটি যখন সে করে, তখন সেবছর সেসময় রবীন্দ্রনাথ কিন্তু ছিলেন না শান্তিনিকেতনে। ভাবতে অবাক লাগে, একটি দশ বছরের বালক, তার বাবার অনুপস্থিতিতে, তার বাবারই সৃষ্টি অবলম্বন করে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগ আর উৎসাহে অমন সুন্দর একটা অনুষ্ঠানের সূচনা করছে শান্তিনিকেতনের মত জায়গায় । বাবার গান তার খুব প্রিয় ছিল, আর তার মধ্যেও বিশেষ করে প্রিয় ছিল - “ এ কি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ “ গানটি। যখন তখন, মাঠে ঘাটে এই গানটি শোনা যেত তার খালি গলায়। বেশ কঠিন গান, কিন্তু সে আনন্দের সঙ্গে এই গানটিকেই বেছে নিয়েছিল - সব সময় ঠিক সুরটি না লাগাতে না পারলেও। তবে এইটি ছাড়াও আরও কিছু গান তার প্রিয় ছিল। একটি গানের খাতা ছিল তার, ওপরে লেখা “বন্দেমাতরম”, আর ভেতরে খাতা ভর্তি বাবার গান। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রায় এগারোটি গান ছিল সেই খাতায়। মজার কথা সেই সব গানের শেষে বাবার অনুকরণে নিজের স্বাক্ষর - “ শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর “, যেন গানগুলি সব তার নিজেরই লেখা ।
এই ভিডিওটি সম্পুর্ন মালিক এই চ্যানেল । কেউ কপি করে ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে আপলোড করলে সাথে সাথে কপিরাইট দেয়া হবে ।
ধন্যবাদ
বিনোদন ২৪
3 окт 2024