২২শে শ্রাবণ স্মরণে
আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের তিরোধান দিবস, ২২শে শ্রাবণ উপলক্ষে নিবেদিত হল আকাশবাণী কলকাতার প্রভাতী অনুষ্ঠানে গীত দেবব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে ‘আমার যেতে সরে না মন’ গানখানি। যে দৈনিক সংবাদপত্রের অংশবিশেষ ব্যবহৃত হয়েছে এই আপলোডে, সেটি রবীন্দ্র প্রয়াণের পরবর্তী দিনের (২৩শে শ্রাবণের) আনন্দবাজার পত্রিকা।
এই আপলোডে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষযাত্রার যে ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটিও আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে। রবীন্দ্র প্রয়াণের এক মর্মস্পর্শী চিত্র ফুটে উঠেছে রবীন্দ্র পুত্রবধূ প্রতিমা ঠাকুর রচিত ‘নির্বাণ’ গ্রন্থে। প্রতিমা দেবী লিখছেন -
দিনের আলো ফুটে উঠেছে, নিশ্বাসও আসছে ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে। পূজনীয় রামানন্দ বাবু সাতটার সময়ে এসে তাঁর খাটের পাশে বসে উপাসনা করলেন। বাড়ির মেয়েরা ক্ষণে-ক্ষণে তাঁরই রচিত ব্রহ্মসঙ্গীত গেয়ে উঠছেন, স্তবের গুঞ্জনধ্বনিতে ঘরের মধ্যে দেবালয়ের আভাস উঠছে জেগে। সকালের আলোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে উঠছে লোকের ভিড় - আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, অজানা, অনাহূত কত কে। মনে হচ্ছে সবই ছায়াবাজি, মায়া; কী ভীষণ মিথ্যা এই পৃথিবী… যা সত্য তারই অনন্ত সংগমে চলেছেন গুরুদেব, তাঁর শেষ নিশ্বাস ক্রমে-ক্রমে সমে এসে থামল। সকলের মন-মধ্যে মুহূর্তের জন্য অসীমের অনুভূতি নিবিড় রূপ নিল। বৃহস্পতিবার ৭ই অগাস্ট বারোটা দশ মিনিটে গুরুদেবের নির্লিপ্ত আত্মা দেহবন্ধন থেকে মুক্তি পেল।
সেবিকারা তাঁর পবিত্র দেহ সাজিয়ে দিল শুভ্র ধুতি-উত্তরীয়ে। ললাটে আঁকা হল শ্বেতচন্দনের তিলক, গলায় রজনীগন্ধার গোড়ে - তাঁর যে বেশ কত উৎসবের কত অনুষ্ঠানকে সুন্দর করে তুলত, সার্থক করে তুলত, আজ সেই বেশে তাঁর বিচ্ছিন্ন চৈতন্যের দেহেও আধ্যাত্মিক রূপ দীপ্ত হয়ে উঠল। যে দেহ তিনি পেয়েছিলেন সে তাঁরই চেতনার ও জ্ঞানের উপযুক্ত আধার।
……এদিকে বৃহৎ সমুদ্রের কলরব শুনছি বাইরে। জানলাদরজার উপর পড়ছে ভীষণ করাঘাত, যেন মনে হচ্ছে সমুদ্রের তরঙ্গ-আঘাতে সমস্ত বাড়িটা ভেঙে পড়বে। ভূমিকম্পের কাঁপন উঠছে চারিদিকে। কে যেন এসে বললে এইবারে ওঁকে নিয়ে যাচ্ছে, শোকযাত্রা শুরু হবে। দৌড়ে দেখতে গেলাম জানালা দিয়ে, শেষ দর্শন হল না। একটা প্রকাণ্ড মানবসমুদ্রের ঢেউ তাঁর দেহ গ্রাস করে নিল চকিতে। যে মহামানব তাঁর ধ্যানের উপলব্ধি, সেই বিরাট মানবহৃদয়ের সাগর থেকে আজ বান ডেকে উঠেছে। তারই উত্তাল তরঙ্গ তাঁর দেহকে পার্থিব জগৎ থেকে লুণ্ঠন করে নিয়ে গেল, আর তাঁর মহান আত্মা ব্যাপ্ত হল ভূমার নিরবচ্ছিন্ন স্তব্ধতায়। সেদিন -
দিবসের শেষ সূর্য
শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল পশ্চিম সাগরতীরে,
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় -
কে তুমি,
পেল না উত্তর
নমস্কারান্তে,
জয়ন্তানুজ ঘোষ
7 сен 2024