প্যানক্রিয়াস পাথরে ‘সহিদ পদ্ধতি’। সফল সার্জারী। অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান।LGSH
প্যানক্রিয়াস পাথরে ‘সহিদ পদ্ধতি’। সফল সার্জারী। অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান।LGSH
প্যানক্রিয়াস পাথরে ‘সহিদ পদ্ধতি’। সফল সার্জারী। অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান।LGSH
#pancretic_stone #pancreaticcancer #pancreas
------------------------------------------
মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ অগ্নাশয় বা প্যানক্রিয়াস। যেখানে শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইনসুলিন হরমন উৎপন্ন হয়। বিভিন্ন কারণে অগ্নাশয়ে পাথর হয়ে থাকে। তখন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাথর অপসারণই একমাত্র চিকিৎসা। বিশ্বব্যাপী প্রচলিত পদ্ধতিতে এ অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাথর অপসারণ হলেও রোগীর শরীরে দীর্ঘমেয়াদে ব্যথা থেকে যায়। কিন্তু বাংলাদেশি হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান ভিন্ন পদ্ধতিতে এ অস্ত্রোপচার ব্যবস্থার উদ্ভাবন করেছেন। এতে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ব্যথা নিরাময়ের হার অনেক বেশি। এ অস্ত্রোপচার পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী ‘সহিদ পদ্ধতি’ নামে প্রশংসিত হয়েছে।
জানা গেছে, পুরাতন পদ্ধতির তুলনায় সহিদ পদ্ধতিতে সফলতা অনেক বেশি। এই অস্ত্রোপচারে সময় কম লাগে, রক্তপাত সামান্য, জটিলতা নেই বললেই চলে এবং মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায়। পুরাতন পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের পর যেখানে রোগীদের ব্যথা নিরাময়ের হার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ, সেখানে সহিদ পদ্ধতিতে এই হার ৯৬ ভাগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এই অধ্যাপকের উদ্ভাবিত পদ্ধতি ‘সোসাইটি অব আমেরিকান গ্যাস্ট্রোইনটেসটিনাল অ্রান্ড এন্ডোসার্জন (সাজেস)’ ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। এমনকি পুরাতন পদ্ধতির পরিবর্তে সহিদ পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার চালাচ্ছে সংস্থাটি। সাজেস ওয়েবসাইটে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘সহিদ পদ্ধতি : অগ্নাশয় পাথর চিকিৎসার নতুন ব্যবস্থাপনা।’ ‘সর্বাধিক ব্যথামুক্ত জীবন সবার কাম্য, নতুন পদ্ধতিতে যা সম্ভব।’
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান যুগান্তরকে জানান, ২০১০ সাল থেকে তিনি নিজের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে অগ্নাশয় পাথরের চিকিৎসা করে আসছেন। প্রচলিত পদ্ধতি মূলত ‘রো এন ওয়াই’, যেখানে রোগীর অগ্নাশয়ের দুই দিক সংযোগ করতে হয়। ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে রোগীর শরীরে ব্যথা থেকে যায়। অন্যদিকে তার পদ্ধতি হল ‘জেজুনো জেজুনোস্টমি’। এ পদ্ধতিতে পাথর অপসারণে অগ্নাশয়ের একদিক থেকে সংযোগ করা হয়। ফলে অস্ত্রোপচারজনিত রক্তক্ষরণ কম হয়। এ পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারে সময়ও অনেক কম লাগে। এ পর্যন্ত তিনি ১১৫টি অস্ত্রোপচার করেছেন। যার সফলতার হার শতভাগ।
অগ্নাশয়ের পাথর সম্পর্কে এই চিকিৎসক বলেন, আমাদের দেশে অগ্নাশয়ে পাথর সংক্রান্ত কোনো গবেষণা নেই। তবে আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুসারে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে তিন থেকে ৫ জনের এ রোগ হয়ে থাকে। আর্থিকভাবে অনগ্রসর এবং উচ্চতাপমাত্রার এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে রাজশাহী বিভাগে এ জাতীয় রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তাছাড়া যারা অধিক পরিমাণে মদপান করেন তাদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
অগ্নাশয়ে পাথর হলে রোগী কিভাবে বুঝবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অগ্নাশয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে এর মধ্যে ইনফেকশন, পাথর, টিউমার, ক্যান্সার ইত্যাদি অন্যতম। কারও অগ্নাশয়ে পাথর হলে তিনি পেটের উপরিভাগে ব্যথা অনুভব করবেন। ব্যথার তীব্রতা এতটাই বেশি থাকে, রোগীর পক্ষে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা সম্ভব হয় না। এমনকি ব্যথা নিরাময়ের ওষুধও কাজ করে না। এছাড়া রোগীর নিয়মিত ডায়রিয়া হতে পারে, বমি বমি ভাব হতে পারে। রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে, এমনকি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হতে পারে। এ ধরনের ব্যথা অনুভব হলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটিস্ক্যান, এমআরআই করে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। ব্যথার মাত্রা যদি (প্রেইন স্কোর) ১৫ থেকে ২৪ হয় তাহলে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেয়া হয়। জানা গেছে, অগ্নাশয়জনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর অভাব না থাকলেও দেশে এ সংক্রান্ত সার্জনের বেশ অভাব। সারা দেশে সব মিলিয়ে হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন আছেন ৭ থেকে ৮ জন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, বারডেম হাসপাতালে তিনজন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকায় একজন।
প্রসঙ্গত, অগ্নাশয় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পরিপাক ও অন্তঃক্ষরা তন্ত্রের অন্তর্গত একটি মিশ্র গ্রন্থি। এর মধ্যে অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা দুই ধরনের গ্রন্থিই আছে। এর বহিঃক্ষরা অংশ পরিপাকতন্ত্রের একটি গ্রন্থি, যেটি থেকে নির্গত অগ্নাশয় নালি-পিত্তনালির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ডুওডেনামের মধ্য অংশে উন্মুক্ত হয়।
-----------------------------
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান
প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান
হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারী বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)
চেম্বার : লিভার গ্যাস্ট্রিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল, সাতমসজিদ রোড়, ধানমন্ডি, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য : 01819-228104, 01979-228104
16 май 2024